চৌধুরী আহ্সানুল হায়দার (সাহিদ): শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রেগিং(Ragging) কমবেশি সব জায়গাতেই হয়ে থাকে। তবে বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত এবং শ্রীলংকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রেগিং অনেক সময় মারাত্মক আকার ধারণ করে যা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত করে।
রেগিং(Ragging) কি?
সিনিয়র শিক্ষার্থী কর্তৃক নবাগত (নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি) শিক্ষার্থীদের প্রতি মানসিক, শারীরিক এমনকি যৌন নির্যাতন করাকে রেগিং বলা হয়।
রেগিং এর কারণ সমূহ:
১. সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাদের বসগীরি দেখানোর জন্য রেগিং করে। তারা নতুনদের বোঝাতে চায় যে ,তোমরা নতুন এসেছ সুতরাং তোমাদের আমাদের দেয়া নিয়মকানুন মত চলতে হবে।
২. নতুনরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছুই বোঝেনা এই সুযোগে তাদেরকে নির্যাতন করার একটা উপায় হিসেবে মনে করে সিনিয়ররা।
৩. অনেক সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্যও রেগিং হয়ে থাকে।
৪. অনেক সময় দেখা যায় নবাগতরা সিনিয়রদের যথাযথ সম্মান দিতে চায়না বা অসম্মান করে সেক্ষেত্রেও রেগিং হয়ে থাকে।
রেগিং থেকে সৃষ্ট সমস্যা সমূহ:
১. নতুনরা বাবা-মা, ভাই-বোন ও পরিবারকে ফেলে এখানে আসে। কিন্তু এখানে এসেই যখন কিছু বোঝার আগেই রেগিং এর শিকার হয় ফলে তাদের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে যা ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে।
২. রেগিংজনিত কারণে নতুনরা শিক্ষায় মনোনিবেশ করতে পারেনা, ফলে তাদের ফলাফল খারাপ হয়ে থাকে।
৩. যে সিনিয়র তার প্রতি রেগিং করল সেই সিনিয়র এর উপর প্রতিশোধ নেয়ার ইচ্ছা মনে রয়ে যায় যা থেকে পরবর্তীতে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়।
রাগিং প্রতিরোধে শিক্ষক ও ম্যানেজমেন্ট এর করনীয়:
১. একটি শক্তিশালী Anti Ragging Committee গঠন করা।
২. ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের শুরুতেই Anti-ragging কার্যক্রম সম্পর্কে বলা এবং ভিকটিমদের করণীয় সম্পর্কে অবগত করা ।
৩. নবাগত শিক্ষার্থীদের সাথে সময়ে সময়ে রেগিং সম্পর্কে কথা বলা এবং নিরপেক্ষ ভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে সত্যি রেগিং হয়েছে কিনা তা নিরূপণ করা।
৪. একটি নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করে পরিকল্পিতভাবে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের সাথে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া এবং কোন এক শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে নবাগতদের সিনিয়র হিসেবে সিনিয়ররা তাদেরকে ভালো আচার আচরণ সম্পর্কে শিক্ষা দিবে। এতে করে উভয় পক্ষ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারবে।
নবাগতদের করণীয়:
১. যে কোন প্রকার নির্যাতনের শিকার হলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষককে সাথে সাথে অবগত করা।
২. নির্যাতনের শিকার হলে মন খারাপ না করে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করা এবং শিক্ষকদের উপর আস্থা রাখা যেন সুষ্ঠু বিচার পাওয়া যায়।
রেগিং প্রতিরোধে সিনিয়রদের করণীয়:
১. একজন শিক্ষার্থী লেখাপড়ার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসে, তাই তাকে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ লাভে সহায়তা করা সকল সিনিয়র শিক্ষার্থীদের নৈতিক দায়িত্ব।
২. যদি কোন কারনে নবাগতরা আচার-আচরণে কোন প্রকার কষ্ট দিয়ে থাকে তাহলে তাকে প্রতিউত্তরে নির্যাতন না করে শিক্ষকের মাধ্যমে তাদেরকে বোঝানো উচিত। সিনিয়রদের আচার-আচরণ থেকেই জুনিয়ররা শিখবে। তাই আপনাদের (সিনিয়রদের) এব্যাপারে সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সকল স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু কার্যক্রম পরিচালনা কেবলমাত্র শিক্ষক, ম্যানেজমেন্ট ,শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভর করে না। শিক্ষার ভালো পরিবেশ নিশ্চিত কল্পে সবার সম্মিলিত প্রয়াস আবশ্যক।