কক্সবাজার প্রতিনিধি
টানা দুই দিনের ভারি বর্ষণে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধসে ১২ জন এবং ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছে ৫ জন। সর্বশেষ বুধবার (২৮ জুলাই) বেলা ১২ টার দিকে সদ্য ঘোষিত নতুন উপজেলা ইদগাঁও একটি নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে তিন জেলে ভেসে যায়। পরে ডুবুরিরা উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে নিখোঁজ তিন জেলের মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত তিনজন হলেন- ঈদগাঁও দরগাহ পাড়ার মুহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে মোঃ ফারুক (২৬) ও দেলোয়ার হোসেন (১৫) এবং শাহজাহানের নাতি মুরশেদ (১৬)। এর আগে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নে পাহাড় ধসে একই পরিবারের শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দিবাগত রাত দুইটার দিকে ইউনিয়নের পানখালী ভিলেজারপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন-হ্নীলা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পাহাড়ি গ্রাম ভিলেজার পাড়া এলাকার সৈয়দ আলমের ছেলে শুক্কুর, জুবাইর, আবদুর রহিম, মেয়ে কহিনুর ও জাইনবা। পাহাড় ধসের ঘটনায় নিহত পাঁচজনের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বুধবার (২৮ জুলাই) অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সহায়তার টাকা তুলে দেন। এছাড়াও গত মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প, টেকনাফ ও মহেশখালীতে পাহাড় ধসে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। একই দিন পৃথক এক ঘটনায় পানিতে ডুবে রোহিঙ্গা শিশু নিহত হয়। এনিয়ে ওইদিন মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) পৃথক সময় স্থানে ৬ রোহিঙ্গাসহ আটজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- ক্যাম্পের ব্লক জি/৩৭ এর নুর মোহাম্মদের মেয়ে নুর বাহার (৩০), শাহ আলমের ছেলে শফিউল আলম (১২), ব্লক জি/৩৮ এর ইউসুফের স্ত্রী দিল বাহার (২৪) ও তাদের দুই সন্তান আবদুর রহমান (৩) এবং আয়েশা সিদ্দিকা (২)। পানিতে ভেসে নিহত রোহিঙ্গা শিশুর পরিচয় পাওয়া যায়নি। উখিয়া রাজাপালং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার।তথ্য নিশ্চিত করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামুদ্দৌজা নয়ন বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের এই ঘটনা ঘটে। এতে ৫ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া বৃষ্টিতে খালে গোসল করতে নেমে পানিতে ভেসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পাহাড় ধসের ঘটনায় অনেকেই আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে টেকনাফে পাহাড় ধসে ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে রকিম আলী (৫৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সকাল ১১ দিকে হোয়াইক্যংয়ের মনিরঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রকিম আলী হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডে মনিরঘোনা এলাকার মৃত আলী আহমদের ছেলে। জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, শ্রাবণের অতিবর্ষণে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ভারী বর্ষণে ঢল নেমেছে জেলার তিন প্রধান নদী ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী, চকরিয়ার মাতামুহুরি ও রামুর বাঁকখালীতে। বান ও বৃষ্টির পানিতে জলমগ্ন হয়েছে জেলার নয় উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও সমতল। শত শত বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় অনেক পরিবারে রান্নাও বন্ধ রয়েছে। মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে মাইকিং ও অভিযান চলছে।