সরাসরি অ্যানেস্থেসিওলজির চিকিৎসক নিয়োগ হলে বঞ্চিত হবে অনেক চাকরীরত চিকিৎসক

ডা: বাহারুল আলম


ডা: বাহারুল আলম

চিকিৎসক ও পেশাজীবী নেতা

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা নাই চিকিৎসকের প্রয়োজনীয় সংখ্যা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের কাছে নিয়োগের জন্য প্রেরণ করা। এ বিষয়ে সর্বময় দায়িত্ব পালন করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কি কোন ভয়েস নাই ? তার মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কত পদ সৃষ্টি করতে হবে, চিকিৎসক সহ কত জনবল নিয়োগ দিতে হবে, অর্থ মন্ত্রণালয় হতে অর্থের যোগান পাওয়ার অনুমতি সাপেক্ষে নিয়োগ দেওয়ার যোগ্যতা ও ক্ষমতা থাকবে না – এ কি ধরণের রাষ্ট্রীয় বিধি ? জনবল লাগবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের, নিয়োগ দেবে অন্য মন্ত্রণালয় ! কাদের কারণে ও কাদের স্বার্থে পাকিস্তানী মার্কা সিএসপি নিয়োগের বিধি স্বাধীন বাংলাদেশে এখনও বলবত আছে?

ভয়াবহ করোনা অতিমারীর সময়ে ৪০৯ জন জুনিয়র কনসাল্টেন্ট অ্যানেস্থেসিওলজি নিয়োগের যে সিদ্ধান্তের কথা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে – সে বিষয়েও যথেষ্ট সমালোচনার দাবী রাখে। যেমন জুনিয়র কনসাল্টেন্ট ও সহকারী অধ্যাপক পদ সাধারণত পোষ্ট গ্রাজুয়েশন পরবর্তী পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সৃষ্ট । এসব পদে পদোন্নতি প্রত্যাশী অনেক চিকিৎসক পোস্ট গ্রাজুয়েশন করে উপজেলা , জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন কর্মরত আছে। তাদের পদোন্নতি দিলেই জুনিয়র কনসাল্টেন্ট -এর প্রয়োজনীয়তা মিটে যায়। ঐ সকল শূন্য পদের বিপরীতে নিয়মমাফিক কর্ম কমিশনের মাধ্যমে গ্রাজুয়েট চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে এবং তাদের দ্রুত অ্যানেস্থেসিওলজি-এর উপর প্রশিক্ষণ ও পরবর্তী পোষ্ট গ্রাজুয়েশন করার সুযোগ করে দিলে এ অভাব মিটে যায়। আলাদা করে বিসিএস নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮১ সংশোধন করার প্রয়োজন নাই । অতীতে বহুবার এ বিষয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে, আমলাতান্ত্রিক চক্রে পড়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই এখন অ্যানেস্থেসিওলজি-তে চিকিৎসক ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

বেসরকারি পর্যায়ে অ্যানেস্থেসিওলজিষ্ট এর সংখ্যা খুব নগণ্য – যাদেরকে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া যাবে। কেবল সে কয়জন চিকিৎসকের জন্য বিধিমালা সংশোধন প্রয়োজন হতে পারে। তারপরেও প্রশ্ন ওঠে যে সকল চিকিৎসককে দুইবছর গ্রামে থাকতে হয়েছে , ফাউন্ডেশন ট্রেনিং নিতে হয়েছে , যারা পর্যায়ক্রমে পোষ্ট গ্রাজুয়েশন করার জন্য অধ্যয়নরত , তারা পাশ করার পর দেখা যাবে জুনিয়র কনসাল্টেন্ট পদ শূন্য নাই । পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে তাদের আবারও জেলা, উপজেলায় কর্মরত থাকতে হবে।

এ সকল বিষয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিবেচনায় আনা উচিত। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংবেদনশীল , স্পর্শকাতর বিষয়গুলো ভাববে না। সবসময় বিসিএস-এর মাধ্যমে কত চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে সে কথা ঘোষণা করা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে । কিন্তু কখনো বাংলাদেশের জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যানুসারে কত গ্রাজুয়েট ও পোষ্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসক প্রয়োজন – সেটা নির্ধারণ ও সেই অনুযায়ী নিয়োগের ঘোষণা করা হয় না। প্রতিবারই বিসিএস-এর পূর্বে ৫০০/ ১০০০/ ২০০০/ ৫০০০ চিকিৎসক নিয়োগের ঘোষণা আসে। জনমনে প্রশ্ন জাগে , এই সংখ্যা প্রয়োজনের বিপরীতে নির্ধারিত হয় ? না , কারো মনগড়া ? এ বিষয়ে বিএমএ-র কথা বলা প্রয়োজন ।

[প্রবন্ধ সূত্র: লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here