নার্সিং এবং মিডওয়াইফারির দক্ষতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ কি সঠিক পথে আছে?’ শীষক এ আলোচনাসভা কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন থেকে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দারের সঞ্চালনায় গতকাল ১৩ ডিসেম্বর রবিবার এক অনলাইন সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে অংশ নেন নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তার (অতিরিক্ত সচিব), বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার সুরাইয়া বেগম এবং ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ড. আনিসুর রহমান ফরাজী।
নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তার বলেন সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোকে ধীরে ধীরে কলেজে রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে, ‘সরকারি-বেসরকারি সব নার্সের দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। আগে প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এখন ওরিয়েন্টেশন ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। করোনার ওপরও প্রশিক্ষণ চালু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আশার কথা হলো- হলিক্রস, নটরডেম কলেজের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে এবং জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাও ভবিষ্যৎ দেখে এখন এ পেশায় আসছেন। আন্তর্জাতিক কারিক্যুলামের মানের নার্সিং শিক্ষক গড়ার প্রয়াস আছে।
পেশার উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যমান শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। প্যানেলে যাদের নেওয়া হবে, তারা তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন। প্যানেল সিদ্ধান্ত নেবে কাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদায়ন করা হবে। টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করার পরিকল্পনাও রয়েছে। নিয়োগবিধি এবং অরগানোগ্রাম তৈরির জন্য এ সপ্তাহে একটি প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার সুরাইয়া বেগম বলেন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার মাথা যদি ডাক্তার হন, তা হলে হৃদয় হলেন নার্স। দেশে রেজিস্ট্রার্ড নার্সের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৭১ হাজার; যেখানে চাহিদা ৩ লাখ। সুতরাং তাদের কাছ থেকে মানসম্পন্ন সেবা পাওয়ার আশা করা যায় না।
তিনি আরো বলেন বাংলাদেশের নার্সরা বিদেশে গেলে কেউ তাদের অন্য দেশের নার্স থেকে আলাদা করতে পারে না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক নার্স বিদেশে গেলেও সরকারিভাবে বড় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বাইরে থেকে অনেকে এখান থেকে নার্স নিতে এসেও ফিরে গেছেন। তাই সরকারি-বেসরকারি নার্সিং কলেজ, ইনস্টিটিউটগুলোকে আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।
বিদ্যমান কারিক্যুলামের মান ভালো হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়নি। সবার সহযোগিতা পেলে নার্সরা বিদেশে গিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন।
নার্সিং শিক্ষা এখনো গণমুখী হয়নি উল্লেখ করে ড. ফরাজী বলেন, কিন্তু এর অগ্রগতি খুব আশানুরূপ। দেশে এখন বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এগুলো তদারকির প্রয়োজন। লজিস্টিক সাপোর্ট এবং ক্যাপাসিটি বিল্ডিংও দরকার। নার্সিং এবং মিডওয়াইফারির দক্ষতা বৃদ্ধি করতে শিক্ষকদের জন্য সুনির্দিষ্ট অরগানোগ্রাম প্রয়োজন। আর নার্সদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে তাদের আন্তরিকতা এবং মানসম্পন্ন সেবাদানের মাধ্যমেই।