বিশেষ প্রতিবেদকঃ
মোনালিসা (ছদ্মনাম) কোভিড ওয়ার্ডে কাজ করছেন কখনো এ রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক করে দিচ্ছেন কিংবা ওই রোগীর পালস,অক্সিজেন সেচুরেশন নীরিক্ষা করছেন আর নোট লিখছেন। আবার ছুটে যাচ্ছেন অন্য কোন রোগীর কাছে স্যালাইন বা ইনজেকশন পুশ করছেন।কোন রোগী খারাপ হয়ে গেলে সাথে সাথে উচ্চতর সেবা ইউনিটে রেফার করার ব্যাবস্থা করছেন। কোভিড ওয়ার্ডে কাজ করছেন সরকারি চাকুরীতে যোগদানের পর থেকে। পরিবারের বাকী সদস্যদের কাছ থেকে আলাদা থাকেন। কারণ নিজের অজান্তে যদি করোনার জীবাণু তাদেরকে দিয়ে আসেন।
যখন জানতে চাইলাম কেমন আছেন? মুখে হাসি ফুটিয়ে উত্তর ভালোই আছি! কিন্তু ভাল থাকার হাসিটা ম্লান হয়ে গেল যখন বললাম সরকারি চাকুরী ভালোই থাকবেন। তখন জানালেন যোগদানের পর থেকে এখনো বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের খরচ চালাচ্ছেন আগবাড়িয়ে জানতে চাইলে জানালেন যোগদানের পর থেকে বেতন, বোনাস কিছুই হয়নি। কেন হয়নি জানতে চাইলে , তখনি ডাক পড়ে উনার আরেকটি রোগীর অক্সিজেন সেচুরেশন কমে গেছে উনি (মোনালিসা) ছুটলেন রোগীর কাছে। শুধু তিনি নয় সকল কর্মকর্তা এভাবে কর্মজীবনে এসেও ধার করা টাকা দিয়ে কভিড-১৯ এর সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যেতে হচ্ছে।
হাসপাতালে আইসিইউ এইচডিইউ, রেডজোন, ইয়োলো জোন ও আইসোলেশন সহ সবমিলিয়ে প্রায় ৩০থেকে ৪০জন করোনারোগী ভর্তি থাকেন এছাড়া হাসপাতালে অন্যন্য বিভাগ মিলিয়ে ৪০০-৪৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন এসব রোগীদের নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতে নার্সরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছেন।
গত মে মাসে সরকার করোনা চিকিৎসার জন্য ২০০০চিকিৎসক ও ৫০৫৪ নার্স নিয়োগ প্রদান করেন। তাদের বেতন-ভাতা সংকট না হওয়ার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ দিয়েছেন স্ব স্ব অধিদপ্তরে।
গত ১৩ মে দেশের অন্যন্য হাসপাতালের মত কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে করোনা মোকাবিলায় নার্সরা যোগদান করেন। দেশের অন্যন্য হাসপাতালে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত নার্সরা বেতন বোনাস উত্তোলন করলেও দুঃখজনকভাবে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত নার্সরা ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও বেতন বোনাস পাননি। নার্সদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন রোগীদের মুখে হাসি ফুটলে আমরা তৃপ্ত। চাকুরীতে যেহেতু যোগদান করেছি বেতন-ভাতা একদিন হবে। আশায় বুক বেঁধেছি।
জানা যায় হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী বেতনভাতার ছাড় করাতে টাকা লাগবে অযুহাত দাড় করিয়ে দীর্ঘ চার মাস থেকে বেতন ভাতার সকল কাজ আটকে রেখেছেন। সরকার ও বাংলাদেশ পাবিলিক সার্ভিস কমিশনের সুপারিসে জরুরী অবস্থায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগনের অর্থবরাদ্দ নিয়োগের পর পরেই অধিদপ্তরের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রনালয় থেকে দেয়া হয়েছে।
সরকারের পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় চক্রের হাতে বেতন ভাতা প্রদানের কার্যক্রম ৪ মাস থেকে থমকে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সিনিয়র স্টাফ নার্সগন। সরকারি চাকুরীতে যোগদান করে কভিড-১৯ এর ফ্রন্টলাইনার হওয়া সত্ত্বেও বেতন ভাতা বন্ধের এ সমস্যা সত্যি লজ্জাজনক। এর হোতাদেরকে খুজে বের করে শাস্তির সম্মুখিন করা ও অবিলম্বে বেতন ভাতা ছাড় করাতে যথাযথ কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষনের দাবী জানিয়েছেন তারা।
একইভাবে বেতন বিল ৪ মাসেও ফাইলের মধ্যে আটকে আছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অবাক করা সংবাদ গাজীপুর তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনো পে-ফিক্সেশন করানো হয় নাই।
দায়িত্বে চরম অবহেলার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন অত্র প্রতিষ্ঠানসমুহের কর্তাব্যাক্তিরা। নার্সিং সুপারভাইজর এবং সুপারেন্টেন্ডগনও নিরব। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে পে-ফিক্সেশন বা বেতন বিল নিয়ে কথা বলা তাদের এখতিয়ারের বাহিরে এবং এ ব্যাপারে তাদের কোন নির্দেশনা নেই বলে তারা জানান।