বাংলাদেশের সাস্থ্য সেবায় নার্সের ভূমিকা অতুলনীয়। করোনাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষ যা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছেন । সুরক্ষা সরঞ্জামসমূহের স্বল্পতা থাকা সত্ত্বেও নার্সেগনের সেবায় আন্তরিকতার কোন অভাব পরিলক্ষিত হয়নি। বিজ্ঞজনরা নার্সিং কে চিকিৎসা সেবা খাতের হৃদপিণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। সেবা খাতের উন্নয়নের জন্য জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগগুলো নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং নার্সগন তার কাছে চির কৃতজ্ঞ। দেশের নার্সিং ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানের করার জন্য উনি বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কিন্তু সেবা অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে নার্সিং সমাজে এক বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়েছে। সেই সুযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস করা পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্টরা উড়ে এসে জুড়ে বসে নার্সিংয়ের রেজিস্ট্রেশন দাবি করে।
উল্লেখ্য যে তাদের কোন কোর্স কারিকুলাম ই নার্সিং’র সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং তারা বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল এর অনুমোদিত কোন প্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষা লাভ করেনি।
এমতাবস্থায় নার্সিংয়ে পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্টদের অনুপ্রবেশের চেষ্টায় নার্স সমাজের মাঝে এক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকেই নার্সিংয়ের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বেশকিছু কর্মসূচি পালন করা হয়। কিন্তু কিছু অসাধু চক্রের তত্ত্বাবধায়নে পেশেন্টকেয়ার টেকনোলজিস্টরা নার্সিংয়ে অন্তর্ভুক্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। যা সেবা খাতের জন্য এক বিরাট হুমকি এবং ভবিষ্যতে নার্সিং পেশার অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।
সৃষ্ট জটিলতায় দীর্ঘদিন থেকে প্রায় ১২ হাজারের অধিক নবাগত নার্সের কাউন্সিল রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে যা সরকারি ও বেসরকারি খাতে তীব্র নার্স সঙ্কট তৈরি করেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের বিভিন্ন হিউম্যানিটেরিয়ান অর্গানাইজেশনে কর্মরত নার্সদের সংগঠন “হিউম্যানিটেরিয়ান নার্সেস কমিউনিটি, কক্সবাজার” এর পক্ষ থেকে ০৩/০৭/২১ তারিখে এক জরুরি সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে সরকার প্রণীত যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক প্রতীকী কর্মবিরতির পালন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্তিত সংগঠনের নেতারা বলেন, পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্টরা এদেশের সন্তান তাদের প্রতি ন্যায় বিচার করা উচিত। তাদের শিক্ষা অনুযায়ী তাদের জন্য প্রশিক্ষিত মেডিকেল অ্যাটেনডেন্স কিংবা হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে আলাদা পদ তৈরি করে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে তবে কোন অবস্থাতেই নার্স হিসেবে নয়। এ সময় বক্তারা আরো বলেন, ” নার্সিংয়ে কোন ভাবেই পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্টদের অনুপ্রবেশ মেনে নেয়া হবে না।”
এসময় সংগঠন এর পক্ষ থেকে আহ্বায়ক মোঃ আজমল হক রনি পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্টদের নার্স হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার পেছনে কতিপয় যুক্তি তুলে ধরেন, যেমন-
বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অ্যাক্ট ২০১৬ এর-
*১৪(১)অনুযযায়ী বাংলাদেশে বা বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত কোন নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত নার্সিং শিক্ষা যােগ্যতার ডিপ্লোমা অথবা স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারী কোন ব্যক্তি বাংলাদেশে উক্ত ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি ব্যবহার করতে চাইলে , তা এই আইনের অধীন কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে ।”
*২১(১) অনুযায়ী “নিবন্ধন ব্যতীত নার্সিং, মিডওয়াইফারি বা সহযােগী কোন পেশা গ্রহণ নিষিদ্ধ এবং অন্য যেকোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন এই আইনের অধীন নিবন্ধন ব্যতীত কোন নার্স, মিডওয়াইফ বা সহযােগী পেশায় কোন ব্যক্তি নিজেকে নিয়ােজিত করতে বা নিজেকে নার্স , মিডওয়াইফ বা সহযােগী কোন পেশাজীবী বলে পরিচয় প্রদান করতে পারবে না।”
*২৪(১) অনুযায়ী কোন স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতিরেকে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান কোন নার্সিং, মিডওয়াইফারি বা কোন সহযােগী পেশার শিক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ, পাঠ্যসূচী প্রণয়ন, কোর্স পরিচালনা, প্রশিক্ষণ প্রদান অথবা এতদ্সংক্রান্ত কোন সনদ বা ডিগ্রি প্রদান করতে পারবে না।”
তিনি নার্সিংয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কথা স্মরণ করে উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।