নার্সদের বেসরকারী সংস্থায় ক্যারিয়ার

ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন: দেশে এখন অসংখ্য এনজিও প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি এসব সংস্থ্যা স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও কাজ করছে। নার্স হিসেবে এসব বেসরকারি সংস্থায় কাজ করার অপার সম্ভাবনাও আছে। এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুযোগ-সুবিধা একটু বেশি এবং সম্মানি নিয়মিত তারিখে হওয়ায় এসব চাকরির ক্ষেত্রে আগ্রহীর সংখ্যাও অনেক। কিন্তু জানা নেই কীভাবে এসব চাকরির জন্য তৈরি করতে হবে নিজেকে; কী কী বিষয় দেখা হয় এসব চাকরির ক্ষেত্রে। আর এই জানার অভাবেই এসব চাকরি অনেকটা হাতছাড়াই হয়ে যাচ্ছে। ক্যারিয়ারের আলোচনায় এসব নিয়েই এবার আমার এই আয়োজন।

প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরন এবং উদ্দেশ্য
আগেই জানতে হবে প্রতিষ্ঠানটির কাজ সমন্ধে এবং এর উদ্দেশ্য কী? এনজিওগুলো সাধারণত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে। মানুষের মৌলিক অধিকার যেমন—খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি। তেমনি ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর উন্নয়ন, পরিবেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন কর্মসূচি, ক্ষুদ্রঋণ, এইডস, যক্ষা, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি ও বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনার জন্য কাজ করে। অনেক এনজিওর কাজ বিশেষ এলাকাভিত্তিক হয়ে থাকে। কিছু এনজিও বিশেষ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করে। যেমন-প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী, পথশিশু, শ্রমজীবী শিশু, নির্যাতিতা নারী।কোথায় কেমন সুযোগ
এনজিওগুলোতে বিভিন্ন বিভাগে কাজের সুযোগ রয়েছে। যেমন—গবেষণা, উন্নয়ন, প্রোগ্রাম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও হিসাবরক্ষণ বিভাগ। এসব প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষ সবাই সমান সুযোগ পেয়ে থাকে। তবে মাঠপর্যায়ে দেশের মহিলা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করার জন্য সাধারণত নারীকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়।

কোন পদে কী যোগ্যতা
নার্স হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আপনাকে বেসিক নার্সিং কোর্স যেমন, ডিপ্লোমা বা বিএসসি ইন নার্সিং ডিগ্রি থাকতে হবে সাথে নার্সিং বিএনএমসি’র হালনাগাদ রেজিষ্ট্রেশন । এছাড়া উচ্চতর ডিগ্রি বা শর্ট কোর্স যেমন BLS ,ACLS, OET এগুলো থাকলে ভাল। অনেক এনজিওতে ইংরেজি ও তথ্যপ্রযুক্তি দক্ষতা চাওয়া হয়। অনেক এনজিওর কার্যক্রম আছে বিদেশেও। ভালো ইংরেজি জানা থাকলে সেখানে পাঠানো হতে পারে। কম্পিউটারে দক্ষতার ক্ষেত্রে প্রয়োজন এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারটাও জানতে হয়।

অভিজ্ঞতা যখন বাধা
অভিজ্ঞতা একটি বড় বিষয়। মূলত অভিজ্ঞতার আলোকেই অধিকাংশ নিয়োগ হয়ে থাকে। অভিজ্ঞতার জন্য বিভিন্ন এনজিওতে ইন্টার্নশিপ করা যায়। ইন্টার্নশিপের সুযোগ আছে জাতিসংঘ, আইসিডিডিআরবি, সিআরপি, ব্র্যাক, অ্যাকশনএইড, আশা, মুসলিমএইড, কেয়ারসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে। বিনাবেতনে কাজ করার বিনিময়ে অভিজ্ঞতার সনদ দেয় অনেক এনজিও। বিভিন্ন জব সাইট ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে। ছাত্রাবস্থায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সেটিও বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়।

নিয়োগ প্রক্রিয়া
এনজিওগুলো জবসাইট ও দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয় বিজ্ঞপ্তি। সরাসরি, মেইল বা ডাকযোগে সিভি পাঠাতে হয় প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগ বরাবর। বিজ্ঞপ্তি না থাকলেও নিজ উদ্যোগে সিভি জমা দিতে পারেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে কর্মী বাছাই করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় যারা সিভি জমা দেন, তাদের মধ্যে থেকেও নিয়োগ দেওয়া হয়।

সুযোগ-সুবিধাসমূহ
দেশীয় এনজিওগুলোতে এন্ট্রি লেভেলের নার্সদের বেতন ২৫ — ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত খরচ, উত্সব ভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও বীমা সুবিধা পান কর্মীরা। শুরুতে বেতন কম থাকলেও পরবর্তীকালে পদোন্নতির সাথে সাথে বাড়তে থাকে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। বেশিরভাগ এনজিওতে সময়ভিত্তিক না হয়ে পদোন্নতি দেওয়া হয় পারফর্ম্যান্স ভিত্তিক। তাই সারা বছর ধরে চলে কর্মীদের কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ও নির্দিষ্ট নীতিমালার ওপর বেতনকাঠামো নির্ভর করে। দক্ষতার সঙ্গে ৩-৪ বছর কাজ করতে পারলে আন্তর্জাতিক বা শীর্ষস্থানীয় জাতীয় সংস্থাগুলোতে ভালো বেতনে চাকরি পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোতে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন হতে পারে।

ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন
নার্সিং কর্মকর্তা
জেলা সদর হাসপাতাল, কক্সবাজার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here