সরকারি চাকরিতে চিকিৎসকদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া

Health

ডাঃ আদনান আবিদ হোসেন
বিসিএস পরীক্ষায় স্বাস্থ্য ক্যাডারে উন্নীত চিকিৎসকরা মেডিকেল অফিসার/সহকারী সার্জন হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাদের পদায়ন করা হয়। দুই বছর পর তারা উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির সুযোগ পান। এরপরই মূলত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসকদের পৃথককরণ শুরু হয়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দুটি স্তরে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রশাসনে বিভক্ত হন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্য শিক্ষার দুটি শাখা- ক্লিনিক্যাল ও নন-ক্লিনিক্যাল। নন-ক্লিনিক্যাল চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য শিক্ষার মৌলিক বিষয় অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফার্মাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, এপিডেমিওলজি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফরেনসিক মেডিসিনসহ বিভিন্ন কোর্সে উচ্চতর ডিগ্রির পড়াশোনা করেন। ডিগ্রি শেষে তারা মেডিকেল শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হন। কোনো কোনো সময় তারা সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে যোগদান করতে পারেন।

অন্যদিকে ক্লিনিক্যাল বিষয়ে উচ্চশিক্ষার কোর্স মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি অ্যান্ড অবস, পেডিয়াট্রিকস, কার্ডিওলজি, অফথালমোলজি, অর্থোপেডিকস, নিউরোলজি, নিউরোসার্জারি, কার্ডিয়াক সার্জারিসহ বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল বিষয়ে পড়াশোনা করে ডিগ্রিপ্রাপ্তরা চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। ক্লিনিক্যাল ও নন-ক্লিনিক্যাল এই দুই শাখার চিকিৎসকদের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পদায়ন করা হয়। আবার ক্লিনিক্যাল ডিগ্রিধারী কেউ কেউ সদর হাসপাতালগুলোতে কনসালটেন্ট পদে পদায়ন পান। মেডিকেল কলেজে পদায়নকৃতরা চিকিৎসার পাশাপাশি এমবিবিএস কোর্সের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। কনসালটেন্টগন রোগীর সেবার পাশাপাশি বিভিন্ন প্যারামেডিকস কোর্সে ক্লাস নেন।
মেডিকেল কলেজে পদায়নকৃত চিকিৎসকবৃন্দ সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। কনসালট্যান্ট হিসেবে পদায়নকৃত চিকিৎসকগণ পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র কনসালট্যান্ট হন। এই পদটি সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার। সিনিয়র কনসালটেন্ট চাকরি জীবনের শেষ দিকে অধ্যাপক পদেও দায়িত্বপ্রাপ্ত হতে পারেন। অর্থাৎ, হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ দুটোই একে অপরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত।
অন্যদিকে মেডিকেল অফিসার ও আরএমও/জুনিয়র কনসালটেন্টরা দায়িত্ব পালন ও অভিজ্ঞতা অর্জনের পর স্বাস্থ্য প্রশাসনের দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে পদোন্নতি পান।
১৯৮৮ সালের চিকিৎসক নিয়োগ ও পদোন্নতি বিধিমালা অনুযায়ী, এমডি, এমএ, এফসিপিএসের পাশাপাশি পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জনকারী চিকিৎসকরাও সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপকসহ বিভিন্ন পদে পদোন্নতি পেয়ে আসছেন। তবে সরাসরি প্রভাষক পদে নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। আগে মেডিকেল অফিসার/সহকারী সার্জন পদে নিয়োগ পেয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে, তারপরে ডিগ্রি অর্জন। এরপরে তারা হতে পারবেন শিক্ষক।

২০১২ সালের আগে চিকিৎসকরা পদোন্নতি পেতেন পিএসসির মাধ্যমে। এ প্রক্রিয়ায় পদোন্নতি পাওয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় স্বাস্থ্য খাতের শূন্যপদে সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি হয়। দ্রুত শূন্যপদ পূরণে সরকার অধ্যাপক ছাড়া অন্যান্য পদে বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি (ডিপিসি) চালু করে। শুধু অধ্যাপক পদে পদোন্নতির দায়িত্ব পড়ে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) ওপর।
(লেখকঃ চিকিৎসক ও কলামিস্ট)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here