আমি চাইলে আপনাকে জেল দিতে পারি- চিকিৎসককে ইউএনও

ফের চিকিৎসক হয়রানি

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
কর্মস্থলে যাওয়ার পথে একজন চিকিৎসককে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানার শিকার ডা. ফরহাদ কবির সাতকানিয়া পৌরসভার নাছির ফার্মেসি এবং মক্কা ফার্মেসিতে নিয়মিত চেম্বার করেন। শুক্রবার (২ জুলাই) সন্ধ্যায় রোগী দেখার জন্য মোটরসাইকেলযোগে সাতকানিয়া পৌর এলাকায় চেম্বারে যাওয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম তাঁকে এই জরিমানা করেন।

এ প্রসঙ্গে জরিমানার শিকার ডা. ফরহাদ কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পৌরসভার নাছির ফার্মেসি এবং মক্কা ফার্মেসিতে নিয়মিত চেম্বার করি। ঘটনার দিন আমি চেম্বার শেষ করে ফিরছিলাম। ওই সময় একজন ইমার্জেন্সি রোগী আসার বিষয়ে ফোন পেয়ে মাঝপথ থেকে আবার চেম্বারে যাচ্ছিলাম। তখন সাতকানিয়া পৌরসভার কলেজ রোডের মুখে ইউএনও সাহেবের সাথে দেখা হয়। এ সময় তাঁর সাথে থাকা লোকজন সিগন্যাল দিলে আমি মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আমার পরিচয় দিই। ডাক্তার পরিচয় পাওয়ার পর ইউএনও কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, আপনারা লকডাউন দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। আমরা লকডাউন সফল করতে পারি না বলে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আর এখন আপনারা লকডাউন মানছেন না। এরপর ইউএনওর সাথে থাকা এক লোক আমার কাছ থেকে মোটর সাইকেলের চাবিটি কেড়ে নেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক পর্যায়ে ইউএনও জানান, আমাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। কারণ জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, লকডাউনে বের হয়েছেন এজন্য। তখন আমি উনাকে ডাক্তারদের চেম্বারে যাওয়া-আসায় বিধিনিষেধ না থাকার বিষয়ে বলি। এতে আরও বেশি রাগান্বিত হয়ে তিনি বলেন, আমি চাইলে আপনাকে জেল দিতে পারি। তা করলাম না, এক হাজার টাকা জরিমানা দেন।’

ডা. ফরহাদ কবির আরও বলেন, অনেক লোকের সামনে তিনি চিকিৎসকদের সম্পর্কে অনেক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এক পর্যায়ে মামলা লিখে আমার হাতে দিয়ে এক হাজার টাকা দিতে বলেন। তখন আমি টাকা দিয়ে দিই। এরপর ইউএনও বলেন, সাংবাদিকরা ছবি উঠান, চিকিৎসককে যে জরিমানা করছি এটা পত্রিকায় দিতে হবে। পরে অনেকে মোবাইল ফোনে আমার ছবি তুলেছেন। এ রকম অপমান আমি জীবনে পাইনি। আমি বুঝতে পারছি না একজন ইউএনও কীভাবে এমন খারাপ আচরণ করতে পারেন?’

এ বিষয়ে চিকিৎসক নেতাদের প্রক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘ইতিমধ্যে ঘটনাটি নিয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রশাসন বলেছেন, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন। সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক, প্রশাসনের ডিসি বিভাগের সাথে কথা বলা হয়েছে। উনারা বলছেন, এটা নাকি উনারা দেখছেন। ইউএনওর সাথে কথা বললেন। এখন ইউএনও সাহেবকে জিজ্ঞাসা করা হলে, উনি বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। ইউএনও বললেন, চিকিৎসকের মাথায় হেলমেট ছিল না বলে জরিমানা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক রাতে রোগী দেখতে যাচ্ছেন, রাস্তায় কোনো গাড়ি নাই। আবার হেলমেট লাগবে কিসের? আমি বলেছি, এটা যেভাবেই হোক একটি সুষ্ঠু বিচার করুন, তা না হলে আমরা চিকিৎসকরা যদি প্রাইভেট প্রাক্টিস বন্ধ করে দেই, তাহলে ব্যাপক অসুবিধা হবে। এই মহামারিতে আসলে কোনো আন্দোলন করা যাচ্ছে না। তা না হলে অনেক কিছুই করা যেত। আগে আমরা চট্টগ্রামে আন্দোলন করতাম। এখন যদি কিছু বলি বলবে, আমরা সরকারের বিরুদ্ধে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়। তাহলে লকডাউন শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমরা কঠোর আন্দোলনে নামবো।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উনি যে ডাক্তার সেটা তো আমি বুঝতে পারিনি। উনার সাথে আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং হেলমেট ছিল না। তিনি যে অন্যায় করেছেন সেটা নিজে বুঝতে পেরেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, আমার অন্যায় হয়েছে। আমাকে শাস্তি দেন। পরে আমি এক হাজার টাকা জরিমানা করেছি। আইন সবার জন্য সমান। সরকার আইন করেছে আমরা বাস্তবায়ন করছি। তিনি চাইলে আপিল করতে পারেন। মূলত সন্ধ্যা ৭টার পার পাওয়াতে, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট না থাকায় জরিমানা করা হয়েছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here