কোভিড-১৯ঃ ক্যামব্রিজের জার্নালে নিপসমের বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশিত

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব প্রিভেন্টিভ এন্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম)-এর গবেষক দল কর্তৃক পরিচালিত কোভিড-১৯ বিষয়ক গবেষণা কর্মের ভিত্তিতে প্রণীত একটি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ বিশ্ববিখ্যাত Cambridge University Press-এর Epidemiology and Infection জার্নালে (Volume: 148, 20 October 2020) প্রকাশিত হয়েছে।
RT-PCR পরীক্ষার মাধ্যমে যারা পজিটিভ হয়েছে (অর্থাৎ যারা কোভিড-১৯ রোগী হিসেবে সনাক্ত হয়েছে) এমন ১,০১৬ (৮৫.৬%) জনের সাথে টেলিফোনে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপাত্ত (Data) সংগ্রহ করে এ গবেষণাটি করা হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক হেলথ বা জনস্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিপসম বেশ সুপরিচিত। জনস্বাস্থ্য বিষয়ে গবেষণা সহ প্রতিষ্ঠানটি ৮ টি বিষয়ে এমপিএইচ ও এফফিল ( পিএসএম) প্রদান করে। নিপসমে পরিচালিত গবেষণাটির শিরোনাম: ‘কোভিড-১৯ রোগীদের পরিণতির সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকিসমূহ নিরূপন’ (Assessing risk factors associated with the outcomes of the COVID-19 patients in Bangladesh).
গবেষণাটির ফলাফলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিম্নরুপঃ
০১. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে: ৮৯.৯%-এর বয়স ৫৯ বছর বা তার কম, বাকী ১০.১%-এর বয়স ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব। ৬৪.১% পুরুষ, ৩৫.৯% নারী। চাকুরিজীবী (স্বাস্থ্যকর্মী ব্যতীত) ৩২.৫%, স্বাস্থ্যকর্মী ১৮.৬%, গৃহিনী ১৫.৬%, ব্যবসায়ী ১৪%। শহরের মানুষ ৬৯.৩%, গ্রামের মানুষ ৩০.৭%। ৪২.৭%-এর মাসিক উপার্জন ২০,০০০-৫০,০০০ টাকা, ২৯.৯%-এর ৫০,০০০ টাকার অধিক আর ২৭.৪%-এর ২০,০০০ টাকার কম। ০২. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মৃত্যুহার (CFR) ২.৫%; তন্মধ্যে সনাক্ত হওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে মৃত্যুহার ২.৩% এবং ১৫-২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুহার ০.২%। অর্থাৎ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই (৯২%) মৃত্যুবরণ করছেন ১৪ দিনের মধ্যে। ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ৭৬.০% ও নারী ২৪.০%।
০৩. কোভিড-১৯ সনাক্ত হওয়ার পর জীবিতদের মধ্যে ১৪ দিনের মধ্যে আরোগ্য লাভ করেছেন ৩৫.৬%; অর্থাৎ ১৪ দিন পরও অসুস্থ থেকে গিয়েছেন ৬৪.৪%। আবার ২৮ দিনের মধ্যে আরোগ্য লাভ করেছেন ৯৪%; অর্থাৎ ২৮ দিন পরও অসুস্থ থেকে গিয়েছেন ৬%।
০৪. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে যে সমস্ত সহরোগ (Comorbidity) ঝুঁকি হিসেবে পাওয়া গেছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডায়াবেটিস (DM), হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ), শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ (COPD), হৃদপিণ্ডের রক্তনালীর রোগ (CHD) ইত্যাদি।
০৫. ডায়াবেটিস সর্বাধিক সংখ্যক (৩৫%) কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে বিদ্যমান; ২য় ও ৩য় স্থানে যথাক্রমে হাইপারটেনশন (২৮.৪০%) ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ (১৬.৬০%)।
০৬. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা ১৪ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের ৭৮.৩%-এর ১ বা একাধিক সহরোগ (Comorbidity) ছিল। ১৪ দিন পর যারা বেঁচে ছিলেন তাদের ৩২.৮%-এর ১ বা একাধিক সহরোগ ছিল।
০৭. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের ৮০.০%-এর ১ বা একাধিক সহরোগ (Comorbidity) ছিল। ২৮ দিন পর যারা বেঁচে ছিলেন তাদের ২২.২%-এর ১ বা একাধিক সহরোগ ছিল।
০৮. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা ১৪ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের মধ্যে ৩টি বা ৩টির অধিক সহরোগ (Comorbidity) ছিল এমন রোগীদের সংখ্যা ৩৩.৩%; ২টি সহরোগ ছিল এমন রোগীদের সংখ্যা ২৭.৮%, আর ১টি সহরোগ ছিল এমন রোগীদের সংখ্যা ৩৮.৯%। ০৯. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা ১৪ দিন পর বেঁচে ছিলেন, তাদের মধ্যে ৩টি বা ৩টির অধিক সহরোগ (Comorbidity) ছিল এমন রোগীদের সংখ্যা ৯.২%, ২টি সহরোগ ছিল এমন রোগীদের সংখ্যা ২৭.৫% আর ১টি সহরোগ ছিল এমন রোগীদের সংখ্যা ৬৩.৩%।
১০. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের মধ্যে ৩টি বা ৩টির অধিক সহরোগ (Comorbidity) ছিল এমন রোগীদের সংখ্যা ৩০.০%, ২টি সহরোগ ছিল এমন রোগীদের সংখ্যা ৩০.০% আর ১টি সহরোগ ছিল এমন রোগীদের সংখ্যা ৪০%।
১১. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা ২৮ দিন পর বেঁচে ছিলেন, তাদের মধ্যে ৩টি বা ৩টির অধিক সহরোগ (Comorbidity) ছিল এমন রোগীদের সংখ্যা ০.০%, ২টি সহরোগ ছিল এমন রোগীদের সংখ্যা ৩৭.৫% আর ১টি সহরোগ ছিল এমন রোগীদের সংখ্যা ৬২.৫%।
১২. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা ১৪ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের: ৩৯.১%-এর শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ (COPD), ৩৯.১%-এর ডায়াবেটিস, ৩৪.৮%-এর হাইপারটেনশন, ১৭.৪%-এর হৃদপিণ্ডের রক্তনালীর রোগ (CHD) এবং ৭.৪%-এর দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ (CKD) ছিল।
১৩. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের: ৪০%-এর শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ (COPD), ৩৬.০%-এর ডায়াবেটিস, ৩৬.০%-এর হাইপারটেনশন, ১৬.০%-এর হৃদপিণ্ডের রক্তনালীর রোগ (CHD) এবং ১৬.০%-এর দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ (CKD) ছিল।
১৪. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা ১৪ দিন পর বেঁচে ছিলেন, তাদের: ৮.৭%-এর শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ (COPD), ১৬.৫%-এর ডায়াবেটিস, ১৩.৮%-এর হাইপারটেনশন, ৪.০%-এর হৃদপিণ্ডের রক্তনালীর রোগ (CHD) এবং ১.৭%-এর দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ (CKD) ছিল।
১৫. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা ২৮ দিন পর বেঁচে ছিলেন, তাদের: ৭.৬%-এর শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ (COPD), ১৭.২%-এর ডায়াবেটিস, ১৩.৭%-এর হাইপারটেনশন, ৩.৬%-এর হৃদপিণ্ডের রক্তনালীর রোগ (CHD) এবং ১.৭%-এর দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ (CKD) ছিল।
১৬. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা ১৪ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের : ৬০.৯%-এর বয়স ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব, বাকী ৩৯.১%-এর বয়স ৫৯ বছর বা তদনিম্ন। ৭৮.৩% পুরুষ ও ২১.৭% নারী।
১৭. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা ১৪ দিন পর বেঁচে ছিলেন, তাদের : ৯১.৬%-এর বয়স ৫৯ বছর বা তদনিম্ন, ৮.৪%-এর বয়স ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব। ৬৩.৪% পুরুষ ও ৩৬.৬% নারী।
১৮. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের : ৫৬%-এর বয়স ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব, বাকী ৪৪%-এর বয়স ৫৯ বছর বা তদনিম্ন। ৭৬% পুরুষ ও ২৪% নারী।
১৯. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের যারা ২৮ দিন পর বেঁচে ছিলেন, তাদের : ৯১%-এর বয়স ৫৯ বছর বা তদনিম্ন, ৯%-এর বয়স ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব। ৬৩.৮% পুরুষ ও ৩৬.২% নারী।
২০. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে যারা ১৪ দিনের মধ্যে আরোগ্য লাভ করেছেন তাদের : ৯০.১%-এর বয়স ৫৯ বছর বা তদনিম্ন, ৯.৯%-এর বয়স ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব। ৬৪.৪% পুরুষ ও ৩৫.৬% নারী।
২১. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে যারা ১৪ দিনের মধ্যে আরোগ্য লাভ করেন নি তাদের : ৮৯.৮%-এর বয়স ৫৯ বছর বা তদনিম্ন, ১০.২%-এর বয়স ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব। ৬৩.৯% পুরুষ ও ৩৬.১% নারী।
২২. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে যারা ২৮ দিনের মধ্যে আরোগ্য লাভ করেছেন তাদের : ৯০.৮%-এর বয়স ৫৯ বছর বা তদনিম্ন, ৯.২%-এর বয়স ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব। ৬৩.৮% পুরুষ ও ৩৬.২% নারী।
২৩. কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে যারা ২৮ দিন পরও আরোগ্য লাভ করেন নি তাদের : ৭৫.৪%-এর বয়স ৫৯ বছর বা তদনিম্ন, ২৪.৬%-এর বয়স ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব। ৬৮.৯% পুরুষ ও ৩১.১% নারী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here