রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভয়াবহ সেশন জট নিরসনে ৯ দফা দাবি পেশ

অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টারঃ

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে মানবসেবার উৎকর্ষের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলেও এর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অসহনীয় সেশনজট, দূর্নীতি, আর অনিয়মের এক সুতিকাগারে পরিণত হয়েছে সময়ের চাহিদা মেটাতে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।

রামেবি’র অধীনে পরিচালিত বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং, পোস্ট বেসিক বিএসসি ইন  নার্সিং ও পাবলিক হেলথ নার্সিং কোর্সের নীতিমালা সংশোধনসহ নয় দফা দাবিনামা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি ও প্রাইভেট নার্সিং কলেজের প্রতিনিধিরা। সম্প্রতি নয় দফা সংবলিত এ দাবি রামেবি’র উপাচার্য বরাবর দাখিল করা হয়েছে। এতে রামেবি’র অধীন নার্সিং ও পাবলিক হেলথ কোর্সের বিরাজমান ভয়াবহ সেশনজটসহ বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের দাবি জানানো হয়েছে।

আবেদনে বলা হয়েছে, রামেবির অধীন অন্যান্য কোর্সের সঙ্গে নার্সিং কোর্সগুলোর বৈষম্য দূর করা, সেশনজট নিরসন করে দ্রুত সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ করা দরকার। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একই কোর্সগুলোর শিক্ষার্থীরা চার বছরের কোর্স শেষ করে কাউন্সিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেখানে রামেবির অধীন একই বর্ষের শিক্ষার্থীরা এখনো তৃতীয় বর্ষ উত্তীর্ণ হতে পারেননি। রামেবির অধীন এমবিবিএস শিক্ষার্থীরা তৃতীয় বর্ষে উঠে গেলেও নার্সিং কোর্সের একই বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথমবর্ষই শেষ করতে পারেনি।

অনুসন্ধানে জানা যায় , নার্সিং কলেজের এফিলিয়েশন ও পরীক্ষা কেন্দ্র নির্ধারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক যে পরিদর্শন দল নির্ধারণ করা হয় সে পরিদর্শন দলে ইতিপূর্বে নার্সিং শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও ইদানিং দেখা যাচ্ছে নার্সিং কলেজ এফিলিয়েশন বা পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে কোনো নার্সিং শিক্ষক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত থাকেন না। সম্প্রতি সাখাওয়াত মেমোরিয়াল নার্সিং কলেজ, ডালিয়া নার্সিং কলেজ, আইডিয়াল নার্সিং কলেজ পরিদর্শনের সময় এ চিত্র দেখা গেছে।

এছাড়াও নার্সিং পরীক্ষা পরিচালনা কমিটিতে পূর্বে নার্সিং শিক্ষক সভাপতি হিসেবে থাকার রেওয়াজ থাকলেও ইদানিং কোন কোন পরীক্ষা কমিটিতে স্বয়ং নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রবিউল ইসলাম শাহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একাধারে নীলফামারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, নার্সিং অনুষদের ডিন ও পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। একই ব্যাক্তির একাধিক দায়িত্ব পালনের জন্য অসহনীয় সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগি শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয়, পোস্ট বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং ও পাবলিক হেলথ নার্সিং কোর্সের থিসিস ডিফেন্স পরীক্ষার সভাপতিও তিনি।

২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও রামেবিতে নার্সিং কোর্স সংক্রান্ত কোনো অধ্যাদেশ এখনো প্রণীত হয়নি। অধ্যাদেশ না থাকায় নিজের সুবিধামত ডিন অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রবিউল ইসলাম শাহ নার্সিং অনুষদ পরিচালনা করছেন, এতে করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

দাখিলকৃত দাবিনামায় স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে নার্সিং প্রতিনিধিত্বের সমন্বয়ে একটি সময়োপযোগী অধ্যাদেশ প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে। রামেবিতে একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র নার্সিং অনুষদ গঠনের পাশাপাশি সব পরীক্ষার জন্য স্বতন্ত্র পরীক্ষা কমিটিও গঠন করার দাবি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, উপাচার্যের ভারপ্রাপ্ত পিএস ইসমাইল হোসেন যিনি একজন নন মেডিকেল পার্সন, তিনি নার্সিং কোর্সের বিভিন্ন পরীক্ষায় হল পরিদর্শনে যান এবং নকল খোঁজার অজুহাতে ছাত্রীদের দেহ তল্লাশি করেন। কোন প্রকার অফিশিয়াল আদেশ ছাড়াই শুধুমাত্র উপাচার্যের পিএস পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

বিকাশের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করার বিনিময়ে অনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেয়ায় ইতিপুর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ইল্লে ইন জাবানিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিলেও তিনি এখনো নানা উপায়ে অনিয়মের চেষ্ঠায় লিপ্ত থাকার তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরের নার্সিং কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা ইতিপূর্বে সেশন জট নিরসনে আন্দোলন করলেও কোন কাজ হয়নি বলে জানা যায়। একই শিক্ষাবর্ষে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৩য় বর্ষে উন্নীত হলেও তাদের এখনো ২য় বর্ষেই থাকতে হচ্ছে। অসহনীয় সেশন জট নিরসনে অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধের জোড় দাবি জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা।।

 

 

 

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here