করোনা এবং মানসিক চাপ : মোখছিদা খাতুন

দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সাধারণ মানুষ এবং আমাদের মত যারা আছেন মেডিকেল পারসন তাদের সবাই-ই কম বেশি মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন এতে কোন সন্দেহ নেই। যাই হোক আমি এ বিষয়ে একজন নার্স হিসাবে কিছু টিপস শেয়ার করতে চাই।

মানসিক চাপ কি?
মানসিক চাপ আমাদের সবারই সব সময় ছিল, আছে এবং থাকবে। মানসিক চাপ সাধারণভাবে এড়ানো যায় না এই চাপ আছে বলেই আমরা গতিশীল।

কিন্তু অনেক সময়ে আমাদের এই মানসিক চাপ মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে পড়ে। আর এই চাপ যদি অপটিমাল লেভেল ক্রস করে স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় সেটা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক স্বাস্থ্য দুটোকেই প্রভাবিত করে। আর এই করোনা মহামারির সময় কিভাবে অতিরিক্ত মানসিক চাপ কমিয়ে থাকা যায় তাই শেয়ার করবো-

১। নিজের আত্ববিশ্বাস বাড়ান
এই পরিস্থিতিতে আমরা সব সময় এ্যাংজাইটিতে ভুগছি। কারন আমরা কিভাবে ডিউটি করবো, ডিউটির সময় কি করবো, কি করবো না, ডিউটির সময় আমি কোনভাবে আক্রান্ত হয়ে যাই কিনা, ডিউটি করে বাসায় আসলে আমার দ্বারা পরিবারের কেউ আক্রান্ত হয়ে যায় কিনা, এসব নিয়ে দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই!

তাই আমি বলব একজন নার্স হিসাবে আপনার কি করা উচিত, কি করা উচিত নয় সে বিষয়ে ভাল করে জানুন। সে জন্য কোভিড-১৯ ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ডিজি হেলথ এর গাইডলাইন অনুসরন করুন। যেমন-ইনফেকশন প্রিভেনশন এন্ড কনট্রোল (আইপিসি), ইনজেকশন সেইফ প্রাকটিস এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত ভালভাবে জানুন। এগুলো যখন আপনার আয়ত্বে চলে আসবে তখন দেখবেন আপনার নিজের আত্ববিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে আর আপনার এ্যাংজাইটিও কমে গেছে। আর এ্যাংজাইটি কমলে মানসিক চাপও কমবে।

২। বাস্তবতাকে মেনে নিতে শিখুন
বাস্তব যতই কঠিন হোক না কেন সেটা মেনে নিতে শিখুন। কারন আমরা কেউ জানিনা এই করোনা পরিস্থিতি থেকে কবে মুক্তি পাবো। আর যতদিন না মুক্তি পাচ্ছি ততদিন আমাদের এই করোনা নিয়েই বসবাস করতে হবে। আর যে জিনিস আপনি চিন্তা করে রাতারাতি ঠিক করতে পারবেন না সেটা নিয়ে অযথা চিন্তা করা বন্ধ করুন। যেমন- আপনি প্রতিদিন অফিস করতে রাস্তায় বের হন আর ঢাকার রাস্তায় বের হলে যানজট থাকবে এটা আপনি জানেন তারপরও যদি অযথা টেনশন করেন তাতে শুধু আপনার স্ট্রেস-ই বাড়বে কারন এটা একদিনে ঠিক হওয়ার নয়। তাই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সেভাবে চলতে নিজেকে তৈরি করুন তাহলে মানসিক চাপ অনেকটায় কমে যাবে।

৩। প্রতিদিন হালকা কিছু এক্সারসাইজ করুন
এক্সারসাইজ আপনাকে মানসিক চাপ মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে। আপনি যখন ব্যায়াম করবেন তখন শরীরের কিছু হরমোন নিঃসৃত হয যেগুলো আপনার মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। যেমন-দমের ব্যায়াম, মেডিটেশন, ইয়োগা। এসব ভিডিও দেখে ঘরে বসেই করতে পারেন তাতে স্ট্রেস কমবে।

৪। প্রতিদিন নিজের সাথে একান্তে কিছু সময় কাটান
জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রতিদিন একান্ত নির্জনে কিছু সময় কাটান। প্রতিদিনের ছোট ছোট ভালো লাগার মতো ঘটনা, কিছু স্মৃতি যা মনে পড়লে আপনার ভালো লাগে সেগুলো মনে করুন।

৫। পরিবারের সাথে সময কাটান
মানসিক চাপ অনেক বেড়ে গেলে কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে না। মনে হয় সারাদিন দরজা বন্ধ করে বসে থাকতে অথবা একা থাকতে। কিন্তু তখন যদি তা করেন তাহলে আপনি আস্তে আস্তে তলিয়ে যাবেন। সেজন্য একা একা না থেকে পরিবারের সদস্যদের সাথে মন খুলে কথা বলুন।

৬। বন্ধু বান্ধবদের সাথে কথা বলুন
যাকে আপনি ভরসা করতে পারেন এমন কোন বন্ধুর সাথে আপনার সমস্যা আলোচনা করুন।

৭। ডায়েরী লিখুন
আপনার মন খারাপ থাকলে ডায়েরী লিখার অভ্যাস করুন। প্রতিদিন আপনার ভাললাগা, খারাপ লাগা একটি ডায়েরীতে লিখুন তাহলে আপনার মানসিক চাপ কিছুটা হলেও কমবে।

৮। হাসুন
মনে কষ্ট থাকলে হাসা খুব একটা সহজ কাজ নয়। তবুও চেষ্টা করুন। কমেডি কোন মুভি বা গল্পের বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন বা বন্ধুদের সাথে ভিডিও কলে আড্ডা দিতে পারেন। হাসলে বুক ভরে অক্সিজেন নেওয়া হয় আর তাই মানসিক চাপ কমে।

৯। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এড়িয়ে চলুন
নির্ভরযোগ্য সূত্রছাড়া অন্য কোন নিউজ বা গুজব এড়িয়ে চলুন। সবসময় করোনা আপডেট এর জন্য উৎপেতে না থেকে নিজের কাজে মন দিন কারন তাতে এ্যাংজাইটি বাড়ে।

১০। নিজের যত্ব নিন
পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে নিজেকে প্রস্তুত করুন। প্রতিদিন সঠিক সময়ে পুষ্টিকর খাবার খান, নিজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখুন তাতে মানসিক চাপ দূর হবে।

১১। ধর্মীয় উপাসনা করুন
যার যার ধর্ম অনুযায়ী প্রতিদিন প্রার্থনা করুন। তাহলে মন অনেক প্রশান্ত থাকবে।

১২। প্রশান্তমিূলক মিউজিক বা গান শুনুন
গান শুনলে শরীরের রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন দুটোই কমে। তাই মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেলে আপনার পছন্দের গান শুনুন তাতে মানসিক ভাবে ভালো লাগবে।

১৩। কোনো বিষয়ে অযথা কিংবা অযৌক্তিক দুশ্চিন্তা বন্ধ করুন। সমস্যার সমাধান দুশ্চিন্তা দিয়ে নয়, বুদ্ধি দিয়ে করুন।

১৪। প্রতিদিন কিছু সময় নিজের পছন্দনীয় কোন কাজ করুন। যেমন-রান্না করা, ছবি আঁকা, ঘর গোছানো, গেইম খেলা ইত্যাদি।

লেখক
মোখছিদা খাতুন
আর এন
এমএসএন (এম.এইচ.পি.এন)
জাতীয় নার্সিং উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (নিয়ানার)।
এস এস এন(নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here