বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ফেইসবুক। দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় সব স্বাস্থ্যকর্মীরা এবং এনজিওকর্মীরা ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন। আজকাল ফেসবুকে ঢু্ঁ আমাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েছে।
ফেসবুক যেমন ভাল কাজে ব্যবহার হতে পারে তেমনি এর ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার নজির রয়েছে।
অনেকেই আছেন ফেসবুকে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে ইচ্ছামত যা খুশি পোস্ট করে ফেলেন অথবা স্ট্যাটাস দেন। কিন্তু এর ফলে তার আশেপাশের মানুষের মধ্যে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারেন না। এমনকি অনেকে ফেসবুকের মাধ্যমে অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টাও করে থাকেন। তাই ফেসবুকের ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলা উচিত । সেই ব্যাপারে নিম্নে আলোচনা করা হল:
১. মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে বলেই যা ইচ্ছা তাই আপনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে পারেন না। কারণ এতে আপনার ব্যক্তিগত , পারিবারিক এবং সামাজিক ইমেজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই স্ট্যাটাস দিলে বুঝে শুনে দেওয়াটা বাঞ্ছনীয়।
২. কেউ কোন স্ট্যাটাস দিলে আপনি সাথে সাথে তাকে আক্রমণ করে বসবেন না অথবা তার সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করবেন না। যদি সেটা আপনার বিরুদ্ধে হয় তাহলে সেটা ভিন্ন কথা।
কিন্তু সেই ক্ষেত্রে আপনি তার সাথে ফোনে অথবা মেসেঞ্জারে কথা বলে সমস্যাটি সমাধান করতে পারেন।
৩. কারো কোন স্ট্যাটাস এ আপনার কোন প্রতিষ্ঠানের কোন পণ্য প্রচার এর উদ্দেশ্যে কমেন্ট করবেন না। এতে করে প্রকৃত স্ট্যাটাস দাতা আপনার প্রতি বিরূপ ভাবাপন্ন হতে পারেন। কারণ এটা অত্যন্ত অশোভন কাজ।
৪. কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ যদি থাকে তাহলে সেটা প্রমান সহ উপস্থাপন করুন। আইনগত ব্যবস্থা নিলে আপনি কিন্তু ফেঁসে যাবেন।
৫. ফেসবুকে ধর্মীয় উস্কানিমূলক কোন প্রকার স্ট্যাটাস দিবেন না। কারণ এতে করে আপনার ধর্মীয় গোঁড়ামির মন-মানসিকতা প্রকাশ পাবে। তাছাড়া আপনার একটি স্ট্যাটাস এর কারণে সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে পারে।
৬. মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে এবং আপনার নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শন থাকতেই পারে। কিন্তু তাই বলে বিরোধী পক্ষকে অশোভন ভাষায় আক্রমণ করা গালিগালাজ করা মত প্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে না। তাই রাজনৈতিক বক্তব্য যদিও থাকেন সেটা সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েই দিবেন।
৭. যে কোন প্রকার গুজব প্রচারে আপনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
৮. আপনার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন এর আইডি থেকে অনেক সময় ভুয়া মেসেজ আসতে পারে। কোনো টাকা-পয়সা পাঠানোর চিন্তা করবেন না।
৯. কারো অনুমতি ছাড়া কোন গ্রুপে কাউকে এড করবেন না। যদি কাউকে গ্রুপে নিতে হয় তার কাছে আগে মেসেজ পাঠিয়ে অনুমতি নিয়ে তারপর গ্রুপে এড করবেন।
১০. আপনি যদি কোন গ্রুপের সদস্য হন তাহলে গ্রুপের নিয়মগুলো ভালোভাবে পড়েন তারপর আপনার সদস্য পদের চর্চা করবেন। গ্রুপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কোন স্ট্যাটাস দিবেন না।
১১. ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়া মাত্রই আপনার বন্ধুবান্ধবরা সবাই সেটা দেখবে। বিষয় সমূহ এখানে উপস্থাপন না করাটাই ভালো। যতটুকু সম্ভব পারিবারিক সমস্যা পারিবারিকভাবেই মেটানোর চেষ্টা করুন।
১২. ফেসবুকে যেসব তথ্য মূলক, শিক্ষা মূলক যেমন রক্তের প্রয়োজন, চিকিৎসা সাহায্য প্রয়োজন ইত্যাদি স্ট্যাটাস দেয়া হয় সেগুলো আপনার সাধ্য মতো প্রচার করার চেষ্টা করুন। এতে হয়তো অনেকে উপকৃত হতে পারেন।
শেষে শুধু একটি কথাই বলবো। সবকিছুরই ভালো-মন্দ দিক রয়েছে। ব্যাপারটা নির্ভর করে আমাদের মানে ব্যবহারকারীর উপর আসলে। তাই, আমরা যদি একটু সচেতন থাকি, সামান্য কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলি তাহলে দেখা যাবে আমাদের কোনো স্টেটাসে যারা অন্যায় ভাবে কারো কোন ক্ষতি হচ্ছে না। তাই এ ব্যাপারে আসুন আমরা সবাই নিজেরা সচেতন হই এবং অপরকে সচেতন করে তুলি।