বাড়ছে ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রী – ব্যাবস্থা নিতে কাজ করছে দুদক

আরিফ আহমেদ (শিক্ষা প্রতিবেদক): চাকুরীতে নানা ধরনের সুবিধা আদায়ে ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সংখ্যা বাড়ছে। জানা গেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক, কিছু বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদের কিছু কর্মকর্তারা, সরকারি-বেসরকারি কলেজের কিছু শিক্ষক এসব অনুমোদনহীন ও ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিচ্ছেন।

গত বছর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মকর্তার পিএইচডি ডিগ্রি বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। একই সঙ্গে অনুমোদনহীন ও ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিতে সতর্ক করেছে ইউজিসি। এক গণবিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসি জানিয়েছে, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া ও ইউএসএসহ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নয় এমন দেশি-বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত পিএইচডি ডিগ্রির কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। পিএইচডি বা ডক্টর অব ফিলোসফি একটি উচ্চস্তরের শিক্ষাগত ডিগ্রি। পেশাগত দক্ষতার প্রয়োজনে শিক্ষা, চিকিৎসা, নার্সিং, কলা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষকরা এই ডিগ্রি অর্জন করে থাকেন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার এখতিয়ার নেই। কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বা স্টাডি সেন্টার খোলারও অনুমোদন দেয়নি সরকার। যদিও নামে-বেনামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বা স্টাডি সেন্টার খুলে দেদার বিক্রি হচ্ছে পিএইচডি সনদ।

অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠানের পিএইচডি সনদের গ্রাহকদের বড় অংশ এই ভুয়া ও অনুমোদনহীন সনদ নিয়ে চাকরি ও পদায়নে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নিচ্ছেন। নামের পাশে ডক্টর লিখতেও দেখা যায় অনেককে। একটি সূত্র জানায়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের এক পদস্থ কর্মকর্তা আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন মর্মে একটি সনদ ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন। পিএইচডি সনদের ভিত্তিতে দুটি ইনক্রিমেন্টও লাভ করেন তিনি। পরে ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক তদন্তে তার সনদ অবৈধ প্রমাণিত হয়। তদন্ত কমিটি তার পিএইচডি ডিগ্রি বাতিল, ইনক্রিমেন্ট বাবদ প্রদত্ত অর্থ ফেরত এবং নৈতিক স্খলনের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেয়।

একই প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া পিএইচডি ডিগ্রি কর্মস্থলে জমা দিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক কর্মকর্তা। এ কর্মকর্তার ডিগ্রিও অবৈধ বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে ইউজিসি। ভুয়া ও মানহীন পিএইচডি দেওয়ায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে ইউজিসি। এর মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল ইউনিভার্সিটি (আইসিইউ), মালয়েশিয়ার পার্দানা ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব হনুলুলু, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি মেলবোর্ন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল), দ্য সেন্ট্রাল বোর্ড অব হায়ার এডুকেশন (সিবিএইচই), ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ও আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি।

ইউজিসি সুত্রে জানা যায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা নামধারী অবৈধ প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ নেই। যদিও ইউজিসির মতামত ছাড়াই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অনেকেই এসব সনদ কিনছেন। ইউজিসি বেশ কয়েকবার এসব ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সতর্ক করলেও এটি থামছে না। স্বাস্থ্য খাতেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন বিহীন এধরনের নামধারী প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি ডিগ্রী নিয়ে নিয়ে অনেকেই ডক্টর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানা যায়। এর ফলে সঠিক পন্থায় যারা পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করছে তারা অবমূল্যায়িত হচ্ছে। এদিকে জাল সনদ ধরতে দুদকের কয়েকটি টিম সারা দেশে কাজ করছে। সেখানে যত ধরনের জাল সনদ পাওয়া যাবে সবগুলো তদন্ত করে ধরা হবে বলে জানা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here