মুনতাসীর আমীন শিপলু
স্টাফ রিপোর্টার
তামাক ছেড়ে সুর্যমূখীর চাষ, নবজীবনের আশ্বাস।।
তামাক চাষের পীঠস্থান খ্যাত রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলায় এ বছর সূর্যমুখী ফুলের চাষ বেড়েছে। কম খরচে বেশি লাভ পাওয়ায় কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন। পাশাপাশি তামাক কোম্পানিগুলো ঋণ না দেওয়ায় চাষিরা তামাকের বদলে সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
উপজেলার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগেও তারাগঞ্জে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হতো না। সবাই পড়ে থাকত তামাক নিয়ে। কিন্তু বেলে দো–আঁশ মাটির এ এলাকায় সূর্যমুখীর চাষ যে লাভজনক, বিষয়টা প্রথম ধরতে পারেন ইকরচালী ইউনিয়নের বাছুরবান্ধা গ্রামের মাহাফুজ ইসলাম। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি প্রথম ২০১৮ সালে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেন। তাঁর সাফল্য দেখে অন্য কৃষকেরাও সূর্যমুখী চাষে নেমে পড়েন।
উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাছুরবান্ধা গ্রাম। গ্রামটিতে যাওয়ার পথে অসংখ্য সূর্যমুখীর খেত নজর কাড়ে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বাতাসে দোল খাচ্ছে। সেই খেতে কেউ ছবি তুলছে, কেউ–বা পরিবার–পরিজন নিয়ে এসে সৌন্দর্য উপভোগ করছে।
ফুল চাষে খরচ কম, খাটুনি নেই, লাভও আছে। এ কথা জানিয়ে নবীন চাষী আহাদ আলী গত বছর থেকে এ ফুলের চাষ করছেন। এ বছর ১৭ হাজার টাকা খরচ করে ১ একর জমিতে সূর্যমুখী লাগিয়েছিলেন। সূর্যমুখীর বীজ পেয়েছেন ৭৬০ কেজি। ৮৫ টাকা কেজি দরে ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা পাবেন। খরচ বাদ দিয়ে লাভ হবে ৪৮ হাজার ৬০০ টাকা।
হাজীপুর গ্রামের সূর্যমুখীচাষি মাসুদার রহমান বলেন, ‘আগোত মুই খালি তাংকুর (তামাক) আবাদে করছুনু। কোম্পানির লোকজন তাংকুর বীজ দিছলো, সার দিছলো, পরামর্শ দিছলো। ফির এক শ টাকা কেজি দরে তামাক কিনিও নিছলো। কিন্তু এবার এগলা না দেওয়ায় মুই ৬০ শতক জমিত সূর্যমুখীর চাষ করছুং। খেত ভালোয় হইছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকতা উর্মি তাবাসসুম বলেন, তারাগঞ্জের সূর্যমুখী ফুলের চাষ বাড়ছে। দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে এ ফুলের চাষ করার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ফুল রোপণের ১২০ দিনের মাথায় ফুল থেকে বীজ পাওয়া যায়। লাগানোর এক মাস পর একবার সেচ দিতে হয়। এ খেতে তেমন পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালাই হয় না। তিনি আরও বলেন, সূর্যমুখীর বীজের তেল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান (বিশেষ করে কোলেস্টেরল) থাকে, সূর্যমুখীতে তা নেই। বরং আরও উপকারী উপাদান ও পুষ্টিগুণ বিদ্যমান।
ইকরচালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, সূর্যমুখীর চাষ চাষিদের জন্য সুখবর বয়ে এনেছে। পরিশ্রম কম, অল্প খরচে বেশি লাভ হচ্ছে এ ফুল চাষে। এবার তামাক কোম্পানি থেকে ঋণ না পাওয়ায় তামাক ছেড়ে অনেকে এ ফুলের চাষ করছেন। এ ফুলের বীজ থেকে শর্ষে ভাঙানোর মেশিনের মাধ্যমে তেল তৈরি করা যায়।