রমজান মাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ সময় আমাদের সারা বছরের রুটিনের পরিবর্তন হয়। স্বাভাবিক মাসে যে খাওয়া দাওয়া করি তা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম হয়ে এই মাসে। সারা দিন আহার থেকে বিরত থাকার পর আমরা সন্ধ্যার পর থেকে আহার গ্রহণ করে থাকি। আমাদের কাছে হাটু ও কোমর ব্যথার রোগীরা যারা আসেন তারা বয়সী হয়ে থাকেন।
মূলত ৪০ পরবর্তী বয়সী রোগীরা আমাদের কাছে এসে থাকেন। নামায বা বসে কোরআন শরীফ পড়তে এবং অন্যান্য ধর্মীয় কাজগুলো করতে সাধারণত হাটু ও কোমর ব্যবহার হয়।
এই সময়ে আমরা হাটুর ব্যথা লাঘবের জন্য ইনজেকশন দিয়ে থাকি আর কোমর ব্যথা লাঘবের জন্য আমরা রোগীদের ফিজিও থেরাপি বা ব্যায়াম করতে বলে থাকি। তবে ইনজেকশন দেওয়ার ক্ষেত্রে আমার খুবই সিলেকটিভ। তবে হাটু ও কোমর ব্যথার জন্য নিয়মতি ব্যমের যে অভ্যাস থাকে তাও চালিয়ে নিতে হবে। এটা নির্ভর করে রোগীর বয়সের ওপর। ৩৫ বছরের নীচের যে রোগীরা এ সব কষ্টে থাকেন তাদের জন্য এ ব্যথা উত্তরণ করা বেশ সহজ হয়ে থাকে।
কাকে ইনজেকশন দিবেন বা কাকে দিবেন না তা ডাক্তারের সচেতনতায় থাকতে হবে। যে কোন রোগী আসলেই আমরা তাদেরকে ইনজেকশনের জন্য সিলেক্ট করি না। গুরুতর সমস্যায় যারা আছেন তাদের জন্যই আমরা এ ইনজেকশন ব্যবহার করে থাকি। এগুলো করে থাকি যেন রোজার মাসে রোগী তার ধর্মীয় কাজটা খুব ভালোভাবে করতে পারেন। এই কাজটা আমার হজ বা ওমরার সময়ও করে থাকি। রোগী অনেক সময়ে কষ্টের মধ্যে নামায পড়ে তাতে নামাযে তার মনোযোগ থাকে না বিধায় ইনজেকশন দিয়ে থাকি।
হাটু ও কোমর ব্যথা বয়সের কারণেই বেশি হয়ে থাকে। যে ব্যথা আঘাতের কারণে হয় তা উত্তরণে বিভিন্ন ফেরাপী দেওয়া যেতে পারে তবে বার্ধাক্যজনিত হলে তা থেকে পরিত্রান পাওয়া না গেলেও নিয়ন্ত্রনে রাখা যেতে পারে। রোজার মাসে সব থেকে বেশি বিষয় হলো সচেতনা। আমরা কখনও বলি না যে, আপনি মেঝেতে বসে বসে বা চেয়ারে বসে নামায পড়ুন। যে রোগীরা একদমই দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পারেন না তাদের জন্য ভিন্ন কথা কিন্তু যাদের সমস্যা উত্তরণ করা সম্ভব হবে তাদের জন্য তো একদমই না। এ সময় আমরা তাদেরকে অভ্যাস করতে বলি। হাটু ও কোমর ব্যথা অনেকার্থে নড়াচড়ার পর কমে যায়।
হাটু ও কোমর ব্যথার রোগীরা অনেক সময় এসে ব্যথানাশক ওষুধ দাবি করেন। আমরা রোজার মাসকে খুবই গুরুত্ব দেই। তবে কোন অবস্থাতেই ব্যথানাশক ওষুধ প্রয়োগ করা যাবে না। এ সময় আমাদের করণীয় হলো, আমরা অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগ করি। রোজার মাসে আমরা যে ইফতার খেয়ে থাকি তার সব কিছুতে ইউরিক এসিড থাকে। ইউরিক এসিড হচ্ছে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন এবং কার্বনের হেটারোসাইক্লিক যৌগিক পদার্থ। ইউরিক এসিডের ফলে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর জন্য কঠোর ডায়েট করতে হবে। ওষুধ খেলে এ ইউরিক এসিডের পরিমান কমানো গেলেও ডায়েট না করলে এর মাত্রা আবারও যে কোনো সময় বেড়ে যেতে পারে।
ইউরিক এসিডের যাদের সমস্যা থাকে এবং যারা সাধারণত ইস্থুলকার তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর। ইউরিক এসিডের ফলে যে রোগ হয়ে থাকে তাকে কাউড বলে। অতিভোজন যারা করে থাকেন তাদের এ রোগ হয়ে থাকে। এটা বেশ ক্ষতিকর। এতে বিষ ঢেলে দেওয়ার মতো ব্যথা হয়। ইফতারে সব কিছু বাদ দিয়ে আমার দুধ জাতীয় খাবার খেতে পারি, হালকা ফল খেতে পারি, চিড়া খেতে পারি। তবে কোন প্রকার কোমল পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এ মাসটা বেশ সংকটাপূর্ণ এক মাস। ঈদকে কেন্দ্র করে এ সময় মানুষ সারা দেশে বিভিন্ন প্রান্তে ছোটেন ঈদ কাটাতে। এ সময় হাটু ও কোমর ব্যথা বেশ বেড়ে যেতে পারে। এ সময় দুর্ঘটনার কারণে হাটু ও কোমর ব্যথার রোগী বেশি এসে থাকেন। তবে সাধারণ হাটু বা কোমর ব্যথার রোগী যে মোটেও আসেন না তা কিন্তু নয়। এ সময় হাড় ভাঙ্গা রোগীর আধিক্য থাকে। এ মাসে যে শুধু দুর্ঘটনার জন্য রোগী আসে তা নয় এ সময় ডায়াবেটিক রোগীসহ অন্যান্য রোগীরাও বেশ কষ্টে ভোগেন।”
—
অধ্যাপক ডা. পারভেজ আহসান