সরকারি হাসপাতালে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ ও ফার্মেসি পরিদপ্তর গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি

সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে । স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতন মানুষ এই ভেবে উচ্ছ্বাসিত হবে এবার তাহলে কিছুটা পরিবর্তন হতে যাচ্ছে । প্রেসক্রিপশন কিংবা ওষুধের ডোজ নির্ধারণের বিষয়গুলো তাহলে এখন থেকে ওষুধবিজ্ঞানীদের দ্বারা পুনঃনিরীক্ষণ করা হবে । স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন হবে।

এই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তের অধীনে ফার্মেসি পরিদপ্তর বা দপ্তর গঠন করে দ্রুত উন্নতর বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করনে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বহিঃবিভাগ ফার্মেসিতে ০১ এবং অন্তঃবিভাগে প্রতি ৫০ শয্যার বিপরীতে ০১ গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ তৈরি করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করতে বলা হয়েছে।
যেখানে ফার্মেসি পরিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারি হসপিটাল ও মেডিকেল কলেজ হসপিটাল গুলোতে গ্রাজুয়েট রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত এ-গ্রেড ফার্মাসিস্টদের হসপিটাল ফার্মাসিস্ট হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা হবে । এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূন হলে দেশের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন সম্ভব হবে ।

বিশ্বের প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্যখাত পরিচালিত হয় ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট এবং নার্স এই তিনটি পেশার লোক নিয়ে । যেখানে ডাক্তার রোগ নির্ণয়ে বিশেষজ্ঞ, ফার্মাসিস্ট ওষুধ বিশেষজ্ঞ এবং নার্স পেসেন্ট কেয়ারিং এ বিশেষজ্ঞ । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এদের যে কোন একটা ব্যতীত উন্নত স্বাস্থ্যসেবা সম্ভব নয় । এমনকি আমাদের দেশের নামকরা প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতেও আছে ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট এবং নার্স ।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি ২,৫০০ মানুষের বিপরীতে একজন করে ডাক্তার আছে । যা নিতান্তই অপ্রতুল । আর আমাদের দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে একজন ডাক্তারকে যে পরিমাণ রোগী দেখতে হয় তা বিশ্বের অন্য কোথাও হয় না । বিপুলসংখ্যক রোগীর রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি মেডিসিন প্রেসক্রাইব করতে গিয়ে ভুল হওয়া স্বাভাবিক । কিন্তু হাসপাতালে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট না থাকায় এই প্রেসক্রিপশনের ত্রুটি ধরা সম্ভব হচ্ছে না । পাশাপাশি ঔষধের ডোজ নির্ধারণ এবং একাধিক ঔষধের ক্ষেত্রে ড্রাগ ইন্টারেকশন বিষয়ে একজন ডাক্তারের চেয়ে একজন ফার্মাসিস্ট অনেক বেশি পড়ালেখা করে । সুতরাং এই সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে তারাই সূক্ষ্ম সিদ্ধান্ত দিতে পারবে ।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩০০ জন ইনপেশেন্ট রোগীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে একটা রিসার্চ করা হয়েছিল। সেখানে দেখা যায় প্রেসক্রাইব করা ৫৩.১৯% ঔষধের ড্রাগ ইন্টারেকশন আছে । এতে করে বিভিন্ন মেডিসিনের ডোজ এডজাস্ট করার প্রয়োজন ছিলো যা করা হয়নি । আর এই কাজটি করার জন্য দরকার ছিলো একজন দক্ষ ফার্মাসিস্ট । হাসপাতালে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ হলে এই কাজগুলো তারাই করবে । এতে করে যেমন ডাক্তারদের উপর চাপ কমবে, তেমনিভাবে দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানও উন্নত হবে।

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের পক্ষে ঔষধের পিছনে যথেষ্ট অর্থ খরচ করা সম্ভব নয় । কাজেই কম খরচে ঔষধের সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত । এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে ফার্মাসিস্টরা । হাসপাতালে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দিলে তারা রোগীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে বিকল্প ঔষধের পরামর্শ দিতে পারে । এতে করে জনগণ উপকৃত হবে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে ।

আমাদের দেশের অসচেতন মানুষদের মাঝে একটা মিথ্যা প্রচলিত আছে, “স্বাস্থ্যখাত মানে শুধুই ডাক্তার। গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট না থাকার কারণে জনগণ তাদের প্রাপ্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । আর তাই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে উন্নতর বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করনারথে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বহিবিভাগ ফার্মেসিতে ০১ এবং অন্তবিভাগে প্রতি ৫০ শয্যার বিপরীতে একজন গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ তৈরি করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করতে বলা হয়েছে ।

গত এক দশকে অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়েছে বহুদূর । অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন অনেক ভালো অবস্থানে আছে । আমরা স্বাস্থ্যখাতেও পিছিয়ে থাকতে চাই না । উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও এগিয়ে যেতে চাই স্বাস্থ্যসেবায় । যাতে করে উন্নত স্বাস্থ্যসেবার জন্য আমাদের অন্য কোনো দেশে চিকিৎসার জন্য যেতে না হয় । আমাদের সকলের আস্থার প্রতীক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ থাকবে দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে, সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা ভেবে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের হসপিটাল ফার্মাসিস্ট হিসাবে অতিদ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূন করা হোক ।

লেখক
মোঃ আবু হাসান লিমন
গভ. রেজি. এ-গ্রেড ফার্মাসিস্ট
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক
বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here