জনসনের টিকার প্রয়োগ স্থগিত করার সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার প্রয়োগ স্থগিত করার সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির কেন্দ্রীয় দুটি সংস্থা আজ মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে এই সুপারিশ করে। টিকা প্রয়োগের ফলে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় এ সুপারিশ করা হয়েছে।

এর আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনার টিকা প্রয়োগে রক্ত জমাট বাঁধার খবর প্রকাশ পায়। যদিও এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। এর মধ্যেই জনসনের টিকার বিষয়ে একই ধরনের খবর প্রকাশ পেল।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যে ৬৮ লাখের বেশি ডোজ জনসনের টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। এই টিকা গ্রহণকারী ৫০ বছরের কম বয়সী ছয়জন নারীর শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার খবর পাওয়া যায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় দুটি সংস্থার যৌথ বিবৃতি দিয়ে এই টিকার প্রয়োগ স্থগিতের সুপারিশ করে। ওই সংস্থা দুটি হচ্ছে সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। সংস্থা দুটি বলছে, ওই ছয় নারীর বয়স ১৮ বছর থেকে ৪৮ বছরের মধ্যে। টিকা নেওয়ার ৬ থেকে ১৩ দিনের মধ্যে তাঁদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার উপসর্গ প্রকাশ পেতে থাকে। বিষয়টি তদন্ত করছে তারা।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সতর্কতা হিসেবে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার ব্যবহার স্থগিত করার সুপারিশ করা হয়।’

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকাদান স্থগিতের সুপারিশের ঘটনা প্রতিষ্ঠানটির জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা। এর আগে গত মাসে বাল্টিমোরের কারখানায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের অনিচ্ছাকৃত টিকা দূষণের বিষয়টি জানা যায়। এতে প্রায় দেড় কোটি ডোজ টিকা ফেলে দিতে বাধ্য হয়।

এদিকে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জনসনের টিকার প্রয়োগ স্থগিত করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে সার্বিক টিকাদান কর্মসূচিতে এর বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যে ২০ কোটি জনগণকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ জন্য প্রতিদিন দেশটিতে ৩০ লাখ ডোজ টিকার প্রয়োগ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির টিকাদান অনুশীলন সম্পর্কিত উপদেষ্টা কমিটি বুধবার এ নিয়ে আলোচনা করবেন। এ ছাড়া রক্ত জমাট বাঁধা নিয়ে এফডিএ তদন্ত শুরু করেছে।

জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকায় রক্ত জমাট বাঁধার অভিযোগের ঘটনায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করে বলেছেন, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের টিকাদানের বিরতি দেওয়ার প্রস্তাবে যাঁরা টিকা নিতে অনীহা দেখান, তাঁদের আরও নিরুৎসাহিত করবে।

জনসন অ্যান্ড জনসনের মতোই ইউরোপের বাজারে সমস্যায় পড়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা। দুটি টিকার ক্ষেত্রেই একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এতে রূপান্তরিত ও নিরীহ ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যবহারের ফলে কয়েকটি দেশে খুব কমসংখ্যক রক্ত জমাট বাঁধার খবর পাওয়া যায়। এরপর অনেক দেশ ওই টিকা ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। কয়েকটি দেশে টিকাটি কেবল বয়স্ক ব্যক্তিদের দেওয়া হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here