লিনা মেদিনাঃ বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ মা

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ কনিষ্ঠতম মা হয়ে বিশ্বকে বিস্মিত করেছিলেন লিনা। মাত্র ৫ বছরে অন্তঃসত্ত্বা! নাম হলো তার লিনা মেদিনা। পেরুর বাসিন্দা। লিনার এই পরিস্থিতির কথা নিমেষে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। সাংবাদিকদের ঢল নেমেছিল। তাঁকে নিয়ে, তাঁর জীবনযাপন নিয়ে একাধিক তথ্যচিত্রের জন্য বড় অঙ্কের টাকার প্রস্তাবও পেয়েছিলেন তিনি।

বিশ্বের সর্ব কনিষ্ঠতম মা হয়েছিলেন লিনা। সে মাত্র ৫ বছর ৭ মাস ২১ দিন বয়সে প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন!

লিনার জন্ম হয়েছিল পেরুর টিক্রাপোতে। বাবা ছিলেন টিবুরেলো মেদিনা এবং মা ভিক্টোরিয়া লোসিয়া। লিনারা ছিলেন ৯ ভাইবোন। তবে অন্যদের তুলনায় লিনা যেন একটু তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে ওই বয়সে তাঁর স্তনের বৃদ্ধি সকলের চোখে পড়ছিল।

তার এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ে যখন বিশ্ব জুড়ে চিকিৎসক মহলে টালমাটাল অবস্থা, এ সব কিছু থেকে একেবারেই অজ্ঞাত ছিলেন লিনা। সাড়ে ৫ বছরের মেয়েটি তখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে পুতুল নিয়ে খেলতে ব্যস্ত।

লিনা যখন ৫ বছরের আরও একটি বিষয় নিয়ে সকলেই উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাঁর পেট ক্রমশ বড় হয়ে যাচ্ছিল। মা-বাবা, আত্মীয়-পরিজন থেকে চিকিৎসক সকলেই প্রাথমিক ভাবে ভেবেছিলেন পেটে টিউমার হয়েছে।

পিসকো হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানতে পারেন টিউমারের জন্য নয়, লিনার গর্ভে বড় হচ্ছে তাঁর সন্তান!

লিনা তখন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা! আর লিনার বয়স তখন ৫ বছর ৭ মাস ২১ দিন। অর্থাৎ ৫ বছর হওয়ার আগেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল লিনা! চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর আগে এমন উদাহরণ ছিল না।

এই ঘটনা সামনে আসার সঙ্গে আরও একটি বিষয় সামনে এসেছিল তখন। লিনার উপর হওয়া যৌন হেনস্থার বিষয়। ছোট্ট লিনার সন্তানের বাবা কে! তা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছিল।

এই ঘটনায় তখন তাঁর বাবাকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ না মেলায় ছেড়ে দেওয়া হয়। সে সময় লিনা এতটাই ছোট ছিল যে, তদন্তে কোনও ভাবেই পুলিশকে সাহায্য করতে পারেনি। আজও বিষয়টি রহস্যই থেকে গিয়েছে।

অস্ত্রোপচার এর মাধ্যমে লিনার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখা হয় গেরার্ডো। যে চিকিৎসক তাঁর অস্ত্রোপচার করেছিলেন তাঁরই নামানুসারে। জন্মের সময় সন্তানের ওজন ছিল ২ কিলোগ্রাম ৭০০ গ্রাম। অর্থাৎ স্বাভাবিক ওজন নিয়ে সমস্ত দিক দিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছিল ছোট্ট লিনা।

তাঁর ছেলে গেরার্ডোর কাছে লিনার পরিচয় ছিল বড় দিদি। গেরার্ডো তাঁর সঙ্গে সে ভাবেই আচরণ করতেন। সারা দিন ‘দিদি’র সঙ্গে খেলাধুলো করে, কখনও বা লড়াই করে দিন কেটে যেত। ১০ বছর বয়স হলে গেরার্ডো জানতে পারে লিনা আসলে তার মা।

লিনাকে নিয়ে চিকিৎসক মহলে নানা গবেষণা চলেছে। লা প্রেসি মেডিকেল জার্নালে তাঁকে নিয়ে বিস্তর প্রচ্ছদ প্রকাশিত হয়। তাতে জানা যায়, ৮ মাস বয়স থেকেই ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গিয়েছিল তাঁর। অর্থাৎ তখন থেকেই প্রজননশীল হয়ে পড়েছিল সে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলা হয় প্রিকসিয়াস পিউবার্টি। অর্থাৎ সময়ের অনেক আগেই প্রজনন ক্ষমতা প্রাপ্ত হওয়া। মস্তিষ্কের যে অংশ থেকে যৌন হরমোন নিঃসৃত হয়, সেই অংশেরই কিছু সমস্যার কারণে এমনটি ঘটে থাকে। যা বিরলতম ঘটনা পৃথিবীতে ।

পরবর্তীকালে তাঁর চিকিৎসক গেরার্ডো লোজাডার ক্লিনিকেই তিনি সেক্রেটারির কাজ করতেন। উপার্জনের টাকায় ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়ে বড়ও করেন লিনা। কিন্তু নিজের পরিস্থিতি নিয়ে ঘনিষ্ঠ বৃত্ত ছাড়া কারও সঙ্গেই আলোচনা করেননি তিনি।

১৯৭০ সালে বিয়ে করেন লিনা। দু’বছর পর তাঁর দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। আর প্রথম সন্তান গেরার্ডো ১৯৭৯ সালে মাত্র ৪০ বছর বয়সে অস্থিমজ্জা সংক্রান্ত রোগে মারা যান।

লিনার বয়স এখন ৮৭ বছর। পেরুতেই থাকেন তিনি। আজও তাঁকে তাড়া করে বেড়ান সাংবাদিকরা। কিন্তু প্রথম থেকেই একটি বিষয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছেন তিনি। এই নিয়ে কখনও কোনও সাক্ষাৎকার তিনি কাউকে দেননি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here