যেকোন প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীরাও অনেক সম্মানের আসনে আসীন হন। আমরা যারা স্বাস্থ্যকর্মী; যারা স্বাস্থ্যসেবা বা স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে জড়িত তাদের জন্য স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে কাজ করা সম্মানজনক। প্রতিষ্ঠানসমুহের আন্তর্জাতিক এ স্বীকৃতি প্রদানের জন্য জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল(জেসিআই) নামক একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে ।
১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি সারাবিশ্বেই স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্র যেমন হাসপাতাল, রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিকেল ট্যুরিজম কোম্পানি এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
অলাভজনক এই সংগঠনটি হাসপাতালকে স্বীকৃতির ক্ষেত্রে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে রোগীর সার্বিক নিরাপত্তা এবং অধিকার সংরক্ষণ করা। জেসিআই কর্তৃক স্বীকৃত হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।জেসিআই স্বীকৃতি থাকা মানে নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠানের সেবা বিশ্বমানের। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ২২ হাজারের অধিক জেসিআই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
জেসিআই’র রয়েছে নিজস্ব পরিদর্শক দল। এই দলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞরা কাজ করেন। তারা কোন সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে পরিদর্শনের রিপোর্ট তৈরি করেন। উক্ত পরিদর্শনের ইতিবাচক রিপোর্ট এর ভিত্তিতে সংস্থাটি সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
যেসব বিষয় বিবেচনায় স্বীকৃতি প্রদানের করা হয়-
হাসপাতালের সেবার মান, কর্মরত চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য পেশাজীবীদের দক্ষতা, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সন্তুষ্টি, রোগী বান্ধব পরিবেশের সহজলভ্যতা, বছরে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা এবং তাদের সুস্থতার হার, হাসপাতালের সামাজিক দায়বদ্ধতার কর্মকাণ্ড, কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বচ্ছ নিয়োগ বিধি, বার্ষিক মূল্যায়ন, আর্থিক সুবিধাদি, নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা ইত্যাদি।
জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা:
বর্তমান যুগ বিশ্বায়নের যুগ। তাই মানুষ প্রয়োজনের তাগিদেই স্বাস্থ্যসেবা কেনার জন্য স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হাসপাতালের শরণাপন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। উন্নত দেশের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতলে সেবা গ্রহণে উৎসাহিত হন। কারণ তারা মনে করেন এসমস্ত গেলে যথাযথ সেবা এবং স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।
জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতালের সুবিধাসমূহ –
১. জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতাল রোগীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং মানসম্পন্ন সেবা দিতে বদ্ধপরিকর।
তাই এই সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত হাসপাতালে রোগীরা সেবাগ্রহণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
২. দক্ষ, যোগ্যতাসম্পন্ন স্বাস্থ্যকর্মী দ্বারা সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হয়।
৩. জেসিআইয়ের স্বীকৃতি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতকে আধুনিকায়ন করতে উৎসাহিত করে।
৪. জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতালে স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয় এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন সহ চাকুরীর নিশ্চয়তা থাকে।
৫. জনগণ আন্তর্জাতিক মানের সেবা দেশের হাসপাতালে পায় বলে বিদেশের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে নিরুৎসাহিত হয়।
বাংলাদেশে জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতাল:
আমাদের দেশে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল থাকলেও জেসিআই কর্তৃক স্বীকৃত হাসপাতালের সংখ্যা একেবারে নেই বললেই চলে।
ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল (সাবেক এপোলো হাসপাতাল, বসুন্ধরা)ই জেসিআই স্বীকৃত বাংলাদেশের একমাত্র হাসপাতাল।
পার্শবর্তী দেশ ভারতে এর সংখ্যা প্রায় এগারো।
জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য করণীয়:
১. রোগীর অধিকার নিশ্চিত করতে জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতালে গুরুত্ব তুলে ধরে গণমাধ্যমে রং মাধ্যমে জনমত সৃষ্টি করে।
২. চিকিৎসক সহ অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠনকে জেসিআই স্বীকৃতি লাভের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সচেতন করে তোলা।
৩. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় হাসপাতালগুলোকে জেসিআই স্বীকৃতি লাভের জন্য সাহায্য সহযোগিতা করা। বিশেষ করে বিদেশি স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের আদান-প্রদানে কঠোরতা শিথিল করা।
৪. স্বাস্থ্য শিক্ষা ক্ষেত্রে কারিকুলামে জেসিআই সম্পর্কে অধ্যায় সংযোজন করত: ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যকর্মীদের এই বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা।
চৌধুরী আহ্সানুল হায়দার
কলামিস্ট