আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে বলা হচ্ছে প্রতি ১১জনে একজন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশ বাংলাদেশ ডায়াবেটিকস সোসাইটির নিবন্ধিত রোগী প্রায় সাত লাখ ছড়িয়েছে। সম্প্রতি করোনা সংকটে মানুষজন ইনডোর গেমে আসক্ত হচ্ছে। ফলে শারীরিক কসরত না হওয়ায় লোকজনের মধ্যে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে চলছে। দুর্বল ডায়েট ওজন বাড়ানোর দিকে পরিচালিত করে, শারীরিক ব্যায়াম বা পরিশ্রম অভাবের পাশাপাশি উচ্চ কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের সাথে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিপূর্ণ কারণ। নার্সদের অনেকগুলো কাজ ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
রোগীর লাইফস্টাইল পরিবর্তন করাঃ
প্রায়শই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকিযুক্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করতে পারে।
কিছু অভ্যাস নিয়মিত করতে হবেঃ
সুষম খাদ্য বজায় রাখা, ওজন হ্রাস করা, নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন করা, অ্যালকোহল সেবাকে সীমাবদ্ধ করা এবং ধূমপান ত্যাগ করা। উপরোক্ত অভ্যাসসমুহ টাইপ -২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য কার্যকর উপায়।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায় না, টাইপ-১ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিরা রক্তের গ্লুকোজ লেভেলকে নিয়ন্ত্রণ করে জটিলতাগুলো প্রতিরোধ বা বিলম্বিত করতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেন।
নিয়মিত চেক আপঃ জটিলতার কোনও লক্ষণ পরীক্ষা করতে তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে দেখা করা উচিত যাতে তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিত্সা পেতে পারেন।
শারীরিক ব্যায়ামঃ
রোগীদের ওজন হ্রাস, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি এবং উচ্চ কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ হ্রাস করতে শারীরিক ব্যায়াম সাহায্য করে।
ডায়েটঃ
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ডায়েটও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। স্যাচুরেটেড ফ্যাট, সাধারণ কার্বোহাইড্রেট (যেমন সাদা রুটিতে পাওয়া যায়), চিনি এবং লবণ অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ ডায়াবেটিসের ঝুকি বাড়াতে পারে।
নিম্নলিখিত খাবারগুলি ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং পরিচালনা করতে সুষম ডায়েটের ভিত্তি সরবরাহ করতে পারে:
১. ফলমূল এবং শাকসবজি প্রাকৃতিকভাবে ফ্যাট এবং ক্যালোরিতে কম থাকে এবং ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারের একটি ভাল উৎস।
২.হোলগ্রাগেইনগুলি ফাইবারের একটি ভাল উত্স যা হজমে সহায়তা করে। শিম, ডাল, সয়া ও তোফু জাতীয় খাবার হিসাবে চর্বিযুক্ত মাংস এবং মাছের প্রোটিন বেশি থাকে।
ডায়াবেটিস স্পেশালাইজট নার্সঃ
ডিএসএনরা (ডায়াবেটিস স্পেশালাইজট নার্স) প্রাথমিক সেবাটা প্রদান করে এবং তারা অন্যন্য কি সেবা প্রয়োজন তাও রোগীদের বাতলে দেয়।সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। ডায়াবেটিস নার্সিং, ডায়েটটিক্স এবং পডিয়াট্রি সম্পর্কিত দক্ষতা ডিএসএনদের কাছে থেকে নেয়া যায়।
এছাড়াও দক্ষ ডিএসএন এর সাহায্যে জিপি(জেনারেল প্রাকটিশনার, প্রামারী, সেকেন্ডারী এবং কমিউনিটিতে অথবা নার্সিং হোমগুলিতে নার্স সহ সাধারন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষা এবং সহায়তা সরবরাহ করতে পারেন।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিত্সা করার সময় সমস্ত নার্সিং কর্মীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং পরিষ্কার দায়িত্ব থাকে। পেশাগত স্বাস্থ্য নার্স, জনস্বাস্থ্যে কর্মরত নার্স এবং স্কুল নার্স সহ নার্সিং স্পেকট্রাম জুড়ে নার্সিং দলগুলি ডায়াবেটিস আক্রান্ত বা ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এমন লোকদের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ক্লিনিক্যাল নার্সদের বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে কারণ তারা প্রায়শই যারা বার্ষিক ডায়াবেটিস এবং পায়ের চেকআপ করেন তাদের সেবা দিয়ে থাকেন। এবং ক্লিনিক্যাল নার্সরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্ক্রিনিং, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সহায়তা করার ক্ষেত্রে ক্লিনিকাল ভূমিকা পালন করেন।
রোগীদের আচরণের পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্য সেবার কৌশলগুলি শিখানোঃ
রোগীদের তাদের খাদ্যভ্যাস,জীবনাচার পরিবর্তন, রক্তে গ্লুকোজের পরিমান মাপা,ইনসুলিন প্রদান,হাইপার-হাইপোগ্লাইসেমিয়া সনাক্তরণ গ্লুকোজ কমে গেলে করনীয় কি? মৌখিক বা আইভি থেরাপি কি নিতে হবে তার কৌশল শিখানো। টাইপ -১ডায়াবেটিস সনাক্তকরণ ও জটিলতা কমানো। টাইপ 2 ডায়াবেটিসের স্ক্রিনিং, প্রতিরোধ এবং প্রাথমিক সনাক্তকরণের পর নিজের কি যত্ন নিতে হবে তা প্রচার করা।
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাঃ
মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলি কীভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে সে সম্পর্কে একটি সচেতনতা তৈরী করা।
রোগীর পুষ্টিঃ
রোগীর পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ এবং পূরণ করা।
তাছাড়া কিছু কাজ করতে হবে নার্সদের
মূত্র পরীক্ষা ( ইউরিন সুগার টেস্ট)
রক্তে গ্লুকোজ নিরীক্ষণ
স্বাস্থ্য শিক্ষা
ইনজেকশনযোগ্য থেরাপি
হাইপোগ্লাইসেমিয়া এবং
হাইপারগ্লাইসেমিয়া সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা করা।
লেখক
ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন
রেজিস্টার্ড নার্স ও পুষ্টিবিদ
বিএসসি ইন নার্সিং
এমপিএইচ ইন নিউট্রিশন।
