যেভাবে আপনার চুল সুন্দর থাকবে- পুষ্টিবিদ তাপস দেব রাহুল।

চুলের যত্ন বলতে সাধারনভাবেই আমরা বুঝি দামী দামী প্রসাধনীর ব্যাবহার। তার সাথে তো লেগেই আছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কিন্তু দামী দামী কসমেটিক্স এর ব্যাবহার ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে আমরা আমাদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জ্ঞান রাখলে এবং তা যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে খুব সহজে করে নিতে পারি চুলের যত্নসহ অনেক দামী দামী প্রসাধনীর ঘরোয়া বিকল্প। চলুন দেখে নেই কিভাবে আপনার চুল সুন্দর থাকবে। লিখেছেন- পুষ্টিবিদ তাপস দেব রাহুল।

চুল দ্রুত পড়ে যাওয়ার কারনঃ

☑️ দুশ্চিন্তা করা।
☑️ ভিটামিন ই ও ডি এর অভাব। বিশেষ করে চুলে সূর্যের আলো না লাগলে এবং ভিটামিন-ই জাতীয় খাবার না খেলে।
☑️প্রোটিন জাতীয় খাবারের অভাব।
☑️বংশগত কারন।
☑️দীর্ঘমেয়াদী কিটো ডায়েট অথবা লো-কার্বস ডায়েট করলে
☑️চুলে অতিরিক্ত ক্যামিকেল ব্যবহার করা বিশেষ করে রিবোন্ডিং, হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করা।
☑️সময়মত না ঘুমানো এবং ঘুম কম হওয়া।
☑️চুলের যত্ন না নেয়া।
☑️ঠিকমত চুল না আuচড়ানো।
☑️হরমোনের দ্রুত পরিবর্তন।
☑️গর্ভাবস্থায় ও বাচ্চা প্রসবের পর।
☑️অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন ইত্যাদি।

যেভাবে খাবারের মাধ্যমে চুল পড়া কমবে এবং নতুন করে চুল গজাবেঃ

১. প্রোটিন জাতীয় খাবারঃ
প্রোটিন জাতীয় খাবারের মধ্যেদুই ধরনের প্রোটিন আছে যেমন – প্রানীজ ও উদ্ভিজ প্রোটিন। ১ম শ্রেণীর প্রোটিন যেমন ডিম, দুধ, মাছ প্রতিদিন খাবেন এবং মাং সপ্তাহে দুইদিন খাবেন। ২য় শ্রেণীর প্রোটিনের মধ্যে আছে ডাল, যেকোন লিজিউম জাতীয় খাবার যা চুল গজাতে সাহায্য করবে। দুধ যেহেতু আদর্শ খাবার তাই প্রতিদিন দুধ পান করবেন।
২. ভিটামিন-ই ও বায়োটিন যুক্ত খাবারঃ
যেকোন মাছের তেলে ভিটামিন ই থাকে। ভিটামিন-ই চুলের হরমোনাল বৃদ্ধি করে। ভেজিটেবল ওয়েল যেমন অলিভ ওয়েল, সরিষার তেল, সূর্যমুখীর তেল ইত্যাদিতে ভিটামিন-ই আছে। যেকোন বাদামে ভিটামিন-ই আছে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ১৫ মি.গ্রাম বাদাম খেতে পারবেন। বায়োটিনযুক্ত খাবার চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।। বায়োটিন সবচেয়ে বেশি পরিমানে আছে কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট, টমেটো ও পালং শাকে। ভিটামিন ই ও বায়োটিন যুক্ত খাবার চুলকে করে স্বাস্থ্যজ্জোল, ঘন ও মসৃন।
৩. ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবারঃ
সূর্যের আলো চুলের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ করে চুলে যখন সরাসরি রোদ পড়ে চুলের স্কাল্প সহজেই তখন ভিটামিন-ডি পায় এবং এতে চুল পড়া বন্ধ হয়। তাই প্রতিদিন প্রায় ৫-৮ মিনিট সকালের রোদে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এছাড়াও টক দই, পনির, ছানা, দুধ, কাঠবাদাম, পালং শাক, সামুদ্রিক মাছ, শুটকি মাছ ইত্যাদিতে ভিটামিন-ডি আছে। ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার নিয়মিত গ্রহন করলে চুল পড়া বন্ধ হয়।
৪. ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবারঃ
সামুদিক মাছ, কাঠবাদাম, আখরোট, ডিম, অলিভ ওয়েল ইত্যাদিতে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ যুক্ত ফ্যাটি এসিড আছে যা চুলের হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক রাখে, চুল পড়া রোধ করে এবং ফাংগাল ইনফেকশন থেকে চুলের স্কাল্পকে রক্ষা করে।
৫. ভিটামিন-সি যুক্ত খাবারঃ
আমলকীতে ১০০% ভিটামিন-সি আছে। প্রতিদিন সকালে একটি করে আওমলকী খাবেন এতে করে চুলের ফানগাল ইনফেকশন হওয়া থেকে রোধ পাওয়া যাবে, চুল সুন্দর ও মসৃন হবে। চুলের পুষ্টি এ্যাবসরবেশনের জন্য ভিটামিন সি এর প্রয়োজন আছে যেমন লেবু, কাঁচা মরিচ, কাঁচা আম, লিচু, পেয়ারা, বাতাবী লেবু, তেঁতুল, যেকোন টক জাতীয় ফল ইত্যাদি।
৬. ভিটামিন-এ যুক্ত খাবারঃ
ভিটামিন-এ হল চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিন। ভিটামিন – এ এর মধ্যে মিষ্টি আলু, গাজর ইত্যাদি চুলের জন্য উপকারী। এতে থাকা বিটা ক্যারোটিন চুলকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জল করতে সাহায্য করে। যেকোন শাক এবং ভিটামিন-এ যুক্ত সবজি তেলের সাথে রান্না করলে সহজেই শোষিত হয় এবং চুল পড়া রোধ করে নতুন করে চুল গজাতে সাহায্য করে।

চুলের যত্ন ( ছবি:ইন্টার্নেট)

যেভাবে চুলের যত্ন করবেনঃ

১. নিয়মিত সপ্তাহে ২-৩ দিন চুলে তেল লাগিয়ে স্কাল্পে ভালভাবে ম্যাসাজ করবেন। যেমন – নারিকেল তেল, বাদামের তেল, সরিষার তেল, অলিভ ওয়েল, তিলের তেল, ভিটামিন ই, ক্যাস্টোর ওয়েল। এই তেল একসাথে মিশিয়ে ম্যাসাজ করলে খুব দ্রুত চুল লম্বা হবে এবং চুল পড়া ১০ দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে।
২. প্রতিদিন ৫-৬ বার চুল আঁচড়াবেন। যত বেশি স্কাল্পে চিড়ুনি পড়বে তত বেশি চুলের ব্লাড সার্কুলেওশন ভাল হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে।
৩. চুলের জন্য কোন মেডিসিন খাবেন না। চেষ্টা করুন প্রাকৃতিক খাবার ও ঘরোয়া পদ্ধতিতে যত্নের মাধ্যমে চুল নতুন করে গজানোর।
৪. ভাল ব্রান্ডের তেল এবং শ্যাম্পু ব্যাবহার করুন।
৫. নিয়মিত পানি পান করুন। দুশ্চিন্তা পরিহার করুন।
৬. ভেজা চুল বাধবেন না। চুল শুকানোর জন্য ফ্যানের নীচে থাকুন।
৭. নিয়মিত দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম, ভেজিটেবল তেল ইত্যাদি খাবেন। এতে চুল সুন্দর থাকবে।

তাপস দেব রাহুল
এমপিএইচ,এম এস (নিউট্রিশন & ফুড সাইন্স)
কনসালটেন্ট ডায়েটিশিয়ান & ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিষ্ট।
ওয়েসিস হাসপাতাল, সিলেট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here