প্লাস্টিকের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি, নিয়ন্ত্রন জরুরী

Plastic

দৈনন্দিন জীবনে বেড়েই চলছে ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার।কভিড-১৯ এর শুরু থেকে দেখা যায় চায়ের দোকানগুলোতে প্লাস্টিকের কাপের ব্যবহার অনেকগুন বেড়েছে। সেই সাথে রেস্টুরেন্টে, ফাস্টফুড, রেস্তোরাঁ এমনকি সামাজিক বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানেও অন-টাইম প্লাস্টিকের পাত্র ব্যাবহার করা হচ্ছে।
তবে এমন পাত্রে খাবার গ্রহন করা কতটুকু স্বাস্থ্যকর আমরা তা না জেনেই ব্যাবহার চালিয়ে যাচ্ছি এবং এর ব্যাবহারে উৎসাহিত করেই চলছি।

চিকিৎসা গবেষকদের মতে, প্লাস্টিকের মধ্যে থাকা ‘বিসফেনল’ নামের টক্সিন এ ক্ষেত্রে বড় ঘাতক। গরম খাবার বা পানীয় প্লাস্টিকের সংস্পর্শে এলে ওই রাসায়নিক খাবারের সঙ্গে মেশে যায়। এটি নিয়মিত মানুষের শরীরে ঢুকলে মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের কাজের স্বাভাবিকতা বিঘ্নিত হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণু কমে যায়। তাছাড়া হার্ট, কিডনি, লিভার, ফুসফুস এবং ত্বকও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকী স্তন ক্যান্সার হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

গবেষণায় আরও জানা গিয়েছে, প্লাস্টিকের কাপ বানাতে সাধারণত যে যে উপাদান ব্যবহার করা হয়, সেগুলি বেশি মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে শারীরিক ক্লান্তি, হরমোনের ভারসাম্যতা হারানো, মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমে যাওয়া-সহ একাধিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেবল চায়ের কাপ নয়! প্লাস্টিকের তৈরি পানির বোতল, জুসের গ্লাস, শিশুদের দুধের ফিডার, খাবারের পাত্র, খাবারের মোড়ক- সব জিনিসই কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে নানা রোগের। যেমন- বোতল বা পাত্র তৈরিতে পলিভিনাইল ক্লোরাইডকে (পিভিসি) নরম করে থ্যালেট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশে ক্রমবিকাশমান প্লাস্টিক শিল্পের যাত্রা হয়েছিল ১৯৮০ সালের দিকে। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে, যার অন্যতম কারণ ছিল মানুষের চাহিদা। উৎপাদন ক্ষমতাও নিয়মিত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
গবেষনায় দেখা যায় যে বাংলাদেশের মানুষ গড়ে প্রায় যেখানে পাঁচ কেজি ব্যবহার করে, সেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত প্রায় ছয় কেজি ব্যবহার করে এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ৪০ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করে।
শুধু বাংলাদেশে ১৯৯০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্লাস্টিকের চাহিদা ও উৎপাদন ২০ গুণ বেড়েছে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি করছে অপচনশীল প্লাস্টিক বর্জ্য; যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর হুমকিস্বরূপ।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির মতে, ঢাকা শহরে প্লাস্টিক বর্জ্য ১৯৯২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ১ দশমিক ৭৪ থেকে ৪ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে, যা ২০১৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে।
এখনই যদি আমরা অতিমাত্রায় প্লাস্টিকের ব্যাবহার থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা না করতে পারি বা আমরা নিজেরা বিরত না থাকি এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে না পারি তাহলে পরবর্তীতে প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং আমাদের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। আমাদের এখনই এ থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুজে বের করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here