মাতৃত্বকালীন ছুটি- আরশাদ নাজীব

মাতৃত্বকালীন ছুটি :
মাতৃত্বকালীন ছুটি( Maternity Leave) হল এমন এক ধরণের ছুটি যা গর্ভবতী মহিলাদের দেওয়া হয়ে থাকে সদ্যজাত সন্তান বা সন্তানদের যত্ন নেওয়ার জন্য তাদের শৈশবের প্রাথমিক পর্যায়ে।এটি গর্ভাবস্থার শেষ কয়েক সপ্তাহ থেকেও প্রযোজ্য হয়- যা জন্ম পূর্ববর্তীকালিন ছুটি নামেও পরিচিত। গর্ভবতী মহিলাদের শারীরিক ও মানসিক চাপ এবং শিশু ও মায়ের স্বার্থ রক্ষার্থে মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রাখা হয়েছে। মাতৃত্বকালীন সময়ে বিরতির জন্য, কর্মচারী যে সংস্থার জন্য কাজ করে সেখান থেকে তিনি ছুটিকালীন সময়ে পূর্ণ বেতন পাওয়ার অধিকারি।
মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ:
পূর্বে এই ছুটির মেয়াদ ১২ সপ্তাহ ছিল। পরে মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় কাল আগের ৪ মাসের পরিবর্তে এখন ৬ মাস করা তবে দুই বা তার অধিক সন্তানের জন্মদানের ক্ষেত্রে এই মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় সীমা কম থাকে-এক্ষেত্রে মাতৃত্ব কালীন ছুটির সময়সীমা হয় ১২ সপ্তাহ এবং জন্ম পূর্ববর্তী প্রসবকালীন ছুটির সময় সীমা হয় ৬ সপ্তাহ। কিন্তু একজন মহিলা কর্মচারীকে এন ছুটি পেতে হলে গত ১২ মাসের মধ্যে অন্তত কমপক্ষে ৮০ দিন ঐ সংস্থায় কর্মরত অবস্থায় নিযুক্ত থাকতে হবে। নবজাতককে (৩ মাসের কম বয়সী শিশুকে) দত্তক নেওয়ার সময়েও মাতৃত্বকালীন ছুটির সুবিধা পাওয়া যায় তবে তার সময় সীমা হয় শিশুকে দত্তক নেওয়ার দিন থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে একটু বড় বাচ্চাদের দত্তক নিলে এই ছুটি পাবে কিনা সেটা স্পষ্ট করে কোথাও বলা নাই।
মাতৃত্বকালীন ছুটির শর্ত:
ভারতবর্ষে সর্ব প্রথম মাতৃত্বকালীন সুবিধা আইন, ১৯৬১ একটি মহিলা কর্মচারীকে তার সন্তানের যত্ন নেওয়ার জন্য সময় প্রদান এবং অর্থ-সংস্থানের অধিকার প্রদান করে। অর্থ মন্ত্রণালয় ১৮-০১-২০১১ তারিখে স্বারক নং ০৭.১৭৫.০০৮.০৮.০০০.০০১.২০০০-১২(২০০) মূলে পরিপত্র জারী করে ছুটির মেয়াদ ৪ মাস থেকে ৬ মাস করেছে। সরকারি চাকরি বিধি (পার্ট-১) ১৯৭ ধারার উপধারা ১ সংশোধন করে এ বিধান করা হয়েছে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়। রাষ্ট্রপতির আদেশে এতে সই করেছেন অতিরিক্ত সচিব ইমদাদুল হক, এটি ওই বছরের ৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়।
আবার বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ সালেন আইনের চতুর্থ অধ্যায় এর ৪৫-৪৯ ধারা অনুযায়ী নিম্নলিখিত শর্তসাপেক্ষে ১৬ সপ্তাহের (৮ সপ্তাহ প্রসবের পূর্বে ও ৮ সপ্তাহ প্রসবের পরে) মাতৃকালীন ছুটি ভোগ করবেন। প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের পূর্বে কোম্পানীতে একটানা কমপক্ষে ৬ (ছয়) মাস চাকরি করতে হবে। প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের পূর্বে যে সকল মহিলার কোম্পানীতে একটানা ৬ (ছয়) মাস চাকরি সম্পন্ন হবেনা এবং যে সমস্ত মহিলার সন্তান প্রসবের সময় তার দুই বা ততোদিক সন্তান জীবিত থাকে,তারা মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগের অধিকারী হবেন না। তবে এক্ষেত্রে তিনি অন্য কোন ছুটি পাইবার অধিকারী হলে তা পাবেন। মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটানোর জন্য বাচ্চা জন্ম হবে/হয়েছে এই মর্মে ডাক্তারের সুপারিশকৃত সনদপত্র প্রদান করতে হবে। একজন গর্ভবতী কর্মচারী মাতৃত্বকালীন ছুটি নিতে পারবেন তার প্রসবের তারিখের ৮ সপ্তাহ আগে থেকে। সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে এবং স্যারোগেটেড মায়েদেরকেও মাতৃত্বকালীন ছুটির আইনের আওতায় আত্ততাভুক্ত করা ৮ (আট) সপ্তাহের মধ্যে প্রসবের সম্ভাবনা রয়েছে এই মর্মে একজন চিকিৎসক কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র পেশ করার তিন কর্ম দিবসের মধ্যে প্রসবের পূর্বের ৮ (আট) সপ্তাহের পাওনা পরিশোধ করা হবে। প্রসবের পরবর্তী ৮ সপ্তাহের পাওনা সন্তান প্রসবের প্রত্যয়নপত্র পেশ করার ৩ (তিন) কর্ম দিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। প্রসবের দিনসহ প্রসবের দিন পর্যন্ত মেয়াদের জন্য (প্রথম ৮ সপ্তাহ) সন্তান প্রসবের প্রত্যয়নপত্র পেশ করার তিন কর্ম দিবসের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করা হবে। সন্তান জন্মের পরবর্তী ৮ (আট) সপ্তাহের বাকী পাওনা পরবর্তী ৮ (আট) সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। উপরোক্ত ১৬ (ষোল) সপ্তাহের (পূর্ণ মজুরী) সম্পূর্ণ মেয়াদের জন্য, তিনি যে সন্তান প্রসব করেছেন এ মর্মে প্রমাণ পত্র পেশ করার তিন কর্ম দিবসের মধ্যে তার বেতন ভাতা পরিশোধ করা হবে।
মাতৃত্বকালীন ছুটি- বৈতনিক নাকি অবৈতনিক?:
মাতৃত্বকালীন ছুটির বর্ধিতবস্থাটি সাধারণত মা অথবা সন্তানকে মুখোমুখি হতে হয় এমন পরিস্থির উপর নির্ভর করে।আইনানুযায়ী ২৬ সপ্তাহ বৈতনিক ছুটি হিসাবে ধার্য করা হয়। ২৬ সপ্তাহের পরবর্তী যেকোন ছুটিই (যদি কর্মচারী নিয়ে থাকেন) সাধারণত অবৈতনিক ছুটি হিসাবে ধার্য করা হয় অর্থাৎ ২৬ সপ্তাহের পর পরিস্থিতি বিবেচনায় ছুটির দরকার হলে অবৈতনিক ছুটি দেওয়া হয়।
আরশাদ নাজীব
এডভোকেট- জজ কোর্ট, টাঙ্গাইল।
e-mail: nazibadv@gmail.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here