ভোজন রসিক বাঙালির কাছে ইলিশ মানেই অন্যরকম ফিলিংস, বাঙালির সাধের রুপালি শস্য, মাংসের তুলনায় একটু বেশিই! ভাপা ইলিশ, সর্ষে ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, ইলিশ পোলাও, ইলিশ ভাজা বা ইলিশের মালাইকারী যেভাবেই রান্না হোক স্বাদের কমতি নেই।
সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা থেকে সুরক্ষা দিতে পারে ইলিশের তেল!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনসিন্যাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এমনটাই দাবি করেছেন তাঁদের গবেষণাপত্রে। তাঁরা অবশ্য সরাসরি ইলিশের নাম বলেননি! কিন্তু করোনার প্রদাহ-রোধী যে বিশেষ খাদ্য উপাদানের কথা তাঁরা বলেছেন, তা সবচেয়ে বেশি রয়েছে ইলিশ মাছেই।
সম্প্রতি ‘সায়েন্স অব ফুড’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সিনসিন্যাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দাবি করেন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega-3 fatty acid) করোনা রোগীর আইসিইউ নির্ভরতা অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। মার্কিন গবেষকদের মতে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান শরীরের করোনা সংক্রমণজনিত প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
বিজ্ঞানীরা জানান, ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসাবে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড খাওয়ার চেয়ে সরাসরি খাবারের মাধ্যমে এই উপাদান শরীরে যাওয়া অনেক উপকারী। টুনা, স্যামন, সার্ডিনের মতো সামুদ্রিক মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকলেও তা সামান্য পরিমাণই। তবে ইলিশ মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
বিজ্ঞানীরা জানান, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মধ্যে আইকোসাপেনটানেক অ্যাসিড (UPA) এবং ডকোসাহেস্কানয়েক অ্যাসিড (DHA) আসল কাজ করে। এক কেজি ইলিশ মাছে প্রায় ১২ শতাংশ আইকোসাপেনটানেক অ্যাসিড (UPA) আর ডকোসাহেস্কানয়েক অ্যাসিড (DHA) থাকে। এই দুই উপাদান এনজাইমের সঙ্গে মিশে দু’টি প্রদাহ-রোধী উপাদান সৃষ্টি করে। এর একটি হল আইকোস্যানয়েডস আর অন্যটি হল কিছু লিপিড ম্যাডিয়েটর। এগুলোই শরীরে সংক্রমণজনিত প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
এই গবেষণা প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবী – ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি-সহ একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। উপাদানটি শরীরের অন্যান্য প্রদাহজনিত সমস্যা কমাতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তবে করোনা রোগীদের আইসিইউ নির্ভরতা কমাতে ঠিক কতটা কার্যকর এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, সে প্রশ্নের উত্তর পেতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন।