নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মো. মামুনুর রশীদকে বরিশাল বিভাগে বদলি করা হয়েছে। বর্তমান লকডাউন চলাকালে গত রোববার রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে এক চিকিৎসকের পরিচয়পত্র দেখতে চান পুলিশ সদস্যরা। পরিচয়পত্র দেখা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে এক চিকিৎসকের বাগ্বিতণ্ডার সময় সেখানে এই ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালতের দায়িত্বরত ছিলেন। যা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্মদেয় এবং সেই সাথে চিকিৎসকের সাথে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট এর তর্কবির্তক সবসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
গত রোববার এলিফ্যান্ট রোডে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় নিরাপত্তাচৌকিতে দায়িত্ব পালনরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এক নারী চিকিৎসকের পরিচয়পত্র দেখতে চান। ওই চিকিৎসক নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন। আইডিকার্ড দেখাতে না পারলে তাঁর গাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের পাসের প্রত্যয়নপত্র ছিল৷ তাছাড়া তার গায়ে নামাংকিত এপ্রোনও ছিল।
আজ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাঁকে বদলি করা হয়েছে। তাঁর বদলির বিষয়টি আগে থেকেই প্রক্রিয়াধীন ছিল। তবে সুত্রের খবর অনুযায়ী তাকে ওই ঘটনার জন্যই বদলি করা হয়েছে। এই ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চিকিৎসক সমাজ এবং সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যপক চাপ ছিল।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় যে, ওই নারী চিকিৎসকের পরিচয়পত্র দেখতে চান পুলিশ সদস্যরা। ঘটনার সময় উত্তেজিত হয়ে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা করতে দেখা যায় ওই চিকিৎসককে। তাঁকে উত্তেজিত ভঙ্গিতে কথা বলতে দেখা যায়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়।
এই ঘটনার পর পরই চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেয়। এই সংগঠনগুলো একপক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করে বিবৃতি দিতে দেখা যায়।
চিকিৎসকের দাবি, চিকিৎসককে ইচ্ছা করে হয়রানি করা হয়েছে। তাঁর গাড়িতে লকডাউনের সময় হাসপাতালে কাজ করার আদেশনামা ছিল, পরনে অ্যাপ্রোন ছিল এবং গাড়িতে হাসপাতালের স্টিকার লাগানো ছিল। আর পুলিশের পক্ষের দাবি, চিকিৎসক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করেছেন এবং গালি দিয়েছেন। তিনি নিজ মন্ত্রণালয়ের বৈধ আদেশ লঙ্ঘন এবং ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয় পুলিশের বিবৃতিতে।
এর আগে বিএমএ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে এলিফ্যান্ট রোডে চিকিৎসককে হেনস্তায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছিল।
ওই দিনের ঘটনার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংবাদ ব্রিফিংয়ে চিকিৎসকদের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। চেকপোস্টে ‘চাহিবামাত্র তা প্রদর্শনেরও’ অনুরোধ করেছে।