সরাসরি অ্যানেস্থেসিওলজির চিকিৎসক নিয়োগ হলে বঞ্চিত হবে অনেক চাকরীরত চিকিৎসক।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা নাই চিকিৎসকের প্রয়োজনীয় সংখ্যা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের কাছে নিয়োগের জন্য প্রেরণ করা। এ বিষয়ে সর্বময় দায়িত্ব পালন করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কি কোন ভয়েস নাই ? তার মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কত পদ সৃষ্টি করতে হবে, চিকিৎসক সহ কত জনবল নিয়োগ দিতে হবে, অর্থ মন্ত্রণালয় হতে অর্থের যোগান পাওয়ার অনুমতি সাপেক্ষে নিয়োগ দেওয়ার যোগ্যতা ও ক্ষমতা থাকবে না – এ কি ধরণের রাষ্ট্রীয় বিধি ? জনবল লাগবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের, নিয়োগ দেবে অন্য মন্ত্রণালয় ! কাদের কারণে ও কাদের স্বার্থে পাকিস্তানী মার্কা সিএসপি নিয়োগের বিধি স্বাধীন বাংলাদেশে এখনও বলবত আছে?

ভয়াবহ করোনা অতিমারীর সময়ে ৪০৯ জন জুনিয়র কনসাল্টেন্ট অ্যানেস্থেসিওলজি নিয়োগের যে সিদ্ধান্তের কথা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে – সে বিষয়েও যথেষ্ট সমালোচনার দাবী রাখে। যেমন জুনিয়র কনসাল্টেন্ট ও সহকারী অধ্যাপক পদ সাধারণত পোষ্ট গ্রাজুয়েশন পরবর্তী পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সৃষ্ট । এসব পদে পদোন্নতি প্রত্যাশী অনেক চিকিৎসক পোস্ট গ্রাজুয়েশন করে উপজেলা , জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন কর্মরত আছে। তাদের পদোন্নতি দিলেই জুনিয়র কনসাল্টেন্ট -এর প্রয়োজনীয়তা মিটে যায়। ঐ সকল শূন্য পদের বিপরীতে নিয়মমাফিক কর্ম কমিশনের মাধ্যমে গ্রাজুয়েট চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে এবং তাদের দ্রুত অ্যানেস্থেসিওলজি-এর উপর প্রশিক্ষণ ও পরবর্তী পোষ্ট গ্রাজুয়েশন করার সুযোগ করে দিলে এ অভাব মিটে যায়। আলাদা করে বিসিএস নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮১ সংশোধন করার প্রয়োজন নাই । অতীতে বহুবার এ বিষয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে, আমলাতান্ত্রিক চক্রে পড়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই এখন অ্যানেস্থেসিওলজি-তে চিকিৎসক ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

বেসরকারি পর্যায়ে অ্যানেস্থেসিওলজিষ্ট এর সংখ্যা খুব নগণ্য – যাদেরকে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া যাবে। কেবল সে কয়জন চিকিৎসকের জন্য বিধিমালা সংশোধন প্রয়োজন হতে পারে। তারপরেও প্রশ্ন ওঠে যে সকল চিকিৎসককে দুইবছর গ্রামে থাকতে হয়েছে , ফাউন্ডেশন ট্রেনিং নিতে হয়েছে , যারা পর্যায়ক্রমে পোষ্ট গ্রাজুয়েশন করার জন্য অধ্যয়নরত , তারা পাশ করার পর দেখা যাবে জুনিয়র কনসাল্টেন্ট পদ শূন্য নাই । পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে তাদের আবারও জেলা, উপজেলায় কর্মরত থাকতে হবে।

এ সকল বিষয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিবেচনায় আনা উচিত। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংবেদনশীল , স্পর্শকাতর বিষয়গুলো ভাববে না। সবসময় বিসিএস-এর মাধ্যমে কত চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে সে কথা ঘোষণা করা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে । কিন্তু কখনো বাংলাদেশের জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যানুসারে কত গ্রাজুয়েট ও পোষ্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসক প্রয়োজন – সেটা নির্ধারণ ও সেই অনুযায়ী নিয়োগের ঘোষণা করা হয় না। প্রতিবারই বিসিএস-এর পূর্বে ৫০০/ ১০০০/ ২০০০/ ৫০০০ চিকিৎসক নিয়োগের ঘোষণা আসে। জনমনে প্রশ্ন জাগে , এই সংখ্যা প্রয়োজনের বিপরীতে নির্ধারিত হয় ? না , কারো মনগড়া ? এ বিষয়ে বিএমএ-র কথা বলা প্রয়োজন ।

ডা: বাহারুল আলম
(চিকিৎসক ও পেশাজীবী নেতা)
[প্রবন্ধ সূত্র: লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here