“হৃদয়ের রক্তক্ষরন”- একটি অবহেলিত ও অনিরাপদ সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন নার্সিং কলেজ

বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম কারিগর, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, নিষ্ঠাবান, নির্লোভ, মানবতাবাদী, আনুগত্য ও দেশপ্রেমের অনন্তকালের দৃষ্টান্ত শহীদ বঙ্গতাজ তাজ উদ্দিন আহমদ এর সহধর্মিণীর নামে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং ন্যায় ও নীতির প্রশ্নে আপোসহীন, লক্ষ তারুণের অনুসরণীয় জনাব তানজিম আহমদ সোহেল তাজ এর মায়ের নামে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানে সংস্কৃতি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও বার বার কাপাসিয়ার সর্বস্তরের জনগণের ভালবাসায় নির্বাচিত মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব সিমিন হোসেন রিমি মহোদয়ের মায়ের নামে এ প্রতিষ্ঠান।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং আজকের বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের পুনরুজ্জীবিত করার প্রধান সৈনিক মরহুমা সৈয়দা জোহরা তাজ উদ্দিন এর নামে এ নার্সিং কলেজ।

শুধু এই মহীয়সী নারী নামটার আশীর্বাদেই বাংলাদেশে সর্ব প্রথম উপজেলা পর্যায়ে কোন নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। এতে অনবদ্য অবদান রয়েছে আমাদের কাপাসিয়ার অভিভাবক মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব সিমিন হোসেন রিমি , তৎকালীন মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোঃ নাসিম স্যার এবং সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার। কাপাসিয়ার মানুষ তাদের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ।

প্রতিষ্ঠান সবার, কিন্তু স্বপ্নটা আমার এবং নার্সগণের। তাই এখানকার যে কোন অব্যবস্থাপনা আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, হ্যা! আমার মতো বোবারও । একজন নার্স হিসেবে, কাপাসিয়ার সন্তান হিসেবে।

প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে ২০১৮ সাল। ঐ সময় থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে একইসাথে পোষ্ট বোসিক বিএসসি ইন নার্সিং, ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সাইন্স এন্ড মিডওয়াইফারি এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি এই তিনটি কারিকুলামে শিক্ষার্থী ভর্তি গ্রহণ করা হচ্ছে ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

ব্যবস্থাপনার নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত এ প্রতিষ্ঠানের সমস্যার কথা বারবার আমাকে শুনতে হয়েছে। আটকে রাখা সম্ভব হয় নাই। গত কয়েকদিন থেকে আলোচিত আমাদের স্বপ্নের এ প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি গত ১০ মার্চ ২০২২ তারিখ অটোরিকশায় ফিল্ড পরিদর্শনে গেলে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন চারজন শিক্ষক।

একই ধারাবাহিকতায় ৩১ মার্চ ২০২২ তারিখ কাপাসিয়া থেকে গাজীপুর সদরে ফিল্ড প্র্যাকটিস শেষে অটোরিকশায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছেন পাঁচজন শিক্ষার্থী। একজনের ম্যাক্সিলা ফেসিয়াল সার্জারি এবং নিউরো সার্জিক্যাল ইন্টারভেনশন প্রয়োজম। আরেকজন মহিলা শিক্ষার্থীর হিপ ফ্র্যাকচার (#) pelvic । একজন মহিলার হিপ ফ্র্যাকচারের এর পরিণতি কারও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অন্য দুই মহিলা শিক্ষার্থীর (#) Elbow এবং মাথায় আঘাত। সবাইকে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই কিছু প্রশ্ন উঠছে, আমি ভাবছি, আমাদের এসব সমস্যার সমাধান কেন নেই?

 সমস্যায় জর্জরিত এই প্রতিষ্ঠানটি শুরুর এতদিন পরেও কেন শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের অটো রিকশাতে বা পাবলিক পরিবহনে ফিল্ড প্রাকটিসের যেতে হবে? প্রতিষ্ঠানের গাড়ি নাই? ড্রাইভার কোথায়?
 শুরুর ৩-৪ বছর অতিক্রম করলেও কেন এ প্রতিষ্ঠানে একজন ক্ল্যারিক্যাল কর্মচারী নাই? কেন নার্স শিক্ষকদের কেরানীর সকল কাজ করতে হবে?
 এতদিনেও কেন অফিস সহায়ক, ক্লিনার, বাবুর্চি, দারোয়ান, নৈশপ্রহরী বা কোন প্রকার ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী নাই?
 স্থানীয় ভাবে অনুরোধ করে আউট সোর্সিং করে পাঁচজনের কাজ একজনকে দিয়ে করানো হচ্ছে ক্যান? কেন তাদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ হয়না?
 সংযুক্তি, চলতি দায়িত্ব, অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে সকল নার্সদের পদায়ন দিতে পারলেও কেন প্রধান সহকারি, অফিস সহকারি গাড়ি চালকসহ অন্যান্য কর্মচারীদের পদায়ন দেয়া হচ্ছে না?

 জাতীয় দিবস বা কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে কেন শুধু স্টুডেন্ট ও টিচাররা সেই অনুষ্ঠানের সকল ব্যয় বহন করবে? এত সময় অতিবাহিত হলেও কেন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সংস্থান করা হচ্ছে না?

নার্সদের একজন ছোট সাংগঠনিক কর্মী হিসাবে সবাই চেনাজানার কারণে স্টুডেন্টরা অনেক সমস্যাই শেয়ার করে। কাউকে না জানিয়ে নিরবে যতটুকু সম্ভব আমি ও বিশ্বস্ত মাধ্যম দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি।

ধারাবাহিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এসব দূর্ঘটনার পর সাধারণ নার্সদের দাবী :

 দ্রুততম সময়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আহতদের উন্নত চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বহন।
 কোন অঙ্গহানি হলে বা কোনরকম অক্ষমতা আসলে তার ন্যায্য ক্ষতি পুরন।
 দ্রুত সময়ের মধ্যে সৈয়দা জোহরা তাজ উদ্দিন নার্সিং কলেজ এর সকল সমস্যা চিহ্নিতকরণ করে আশু সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

একজন নার্স হিসেবে, পেশার দায়িত্বশীল কর্মি হিসেবে আমি চাই এবং দৃঢ়তার সাথে চাই, এর সমাধান এখনই হোক। দায়সারাভাবে নয়, কারো ধন্যবাদ বা ফুলের তোড়ার দিকে তাকিয়ে নয়,বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও নার্সিং নিয়ে দেখা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার স্বার্থে নার্সদের সমস্যা খুজে বের করে তা সমাধান করা হোক।

যেখানে যাই শুধু সমস্যায় জর্জরিত এই পেশার সমস্যার কথায় শুনতে হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ সময়ে যেখানে নার্সিং উন্নত বিশ্বের সাথে পাল্লা দেওয়ার কথা ঐ সময়ে নার্সদের আবাসন, খাবার, স্টাইফেন, এপ্রোন, যাতায়াতের সমস্যার কথা শুনতে হয়। এটা দুঃখজনক। এসবের সমাধান দিবে কে? আমরা দ্রুততম সময়ে এর সমাধান চাই।

মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জুয়েল
সাবেক সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখা।

(লেখাটি লেখকের ব্যাক্তিগত অভিমত। BD Health Express এ জাতীয় ব্যাক্তিগত লেখার কোনো দায় বহন করবেনা।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here