বাংলাদেশে বুস্টার ডোজ গ্রহণকারীর শরীরে শতভাগ এন্টিবডি পাওয়া গেছে

ছবি: মোঃ সোহেল গাজী ও মোঃ আরিফ খান

বুস্টার ডোজ গ্রহণকারী শতভাগের এন্টিবডি পাওয়া গেছে, ২ ডোজ টিকা গ্রহণের ৬ মাস পর ৭৩ শতাংশের এন্টিবডি হ্রাস পেয়েছে: মাননীয় উপাচার্য ও গবেষণার প্রধান গবেষক অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ

বুস্টার ডোজ গ্রহণকারী শতভাগের এন্টিবডি পাওয়া গেছে। ২ ডোজ টিকা গ্রহণের ৬ মাস পর ৭৩ শতাংশের এন্টিবডি হ্রাস পেয়েছে। এই গবেষণা থেকে টিকার বুস্টার ডোজ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বুস্টার ডোজ প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা যাচাই এর জন্য সমসাময়িক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি প্রযোজ্য সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। আজ বুধবার ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ইং তারিখে শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ও “Haematological Parameters and Antibody Titre After Vaccination Against SARS-CoV-2” শীর্ষক গবেষণার প্রধান গবেষক অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।
মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, গবেষণায় দুই ডোজ টিকা গ্রহণ সম্পন্ন হবার ১ মাস পর, দুই ডোজ টিকা গ্রহণের ৬ মাস পর এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণের ১ মাস পর শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি এন্টিবডি এর মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ২২৩ জন অংশগ্রহণকারীর ক্ষেত্রে দুই ডোজ টিকা গ্রহণ সম্পন্ন হবার ১ মাসপর এবং তন্মধ্যে ৩০ জনের দুই ডোজ টিকা গ্রহণের ৬ মাস পর ও বুস্টার ডোজ গ্রহণের ১ মাস পর এন্টিবডি এর মাত্রা পরিমাপ করা হয়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের সাথে জড়িত ছিলেন। অর্ধেকের বেশি অংশগ্রহণকারী পূর্ব থেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানীসহ অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন, তবে এ ধরণের রোগের কারণে এন্টিবডি তৈরিতে কোন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি। ৪২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী টিকা গ্রহণের পরে মৃদু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এর কথা জানিয়েছিলেন, তবে রক্ত জমাট বাধা বা অন্য কোন জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গবেষণাকালীন সময়ে পরিলক্ষিত হয়নি। টিকা গ্রহণের পর প্রথম ধাপে ২২৩ জনের মাঝে ৯৮ শতাংশের শরীরে এন্টিবডি এর উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। যারা পূর্বেই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের শরীরে তুলনামূলক বেশি এন্টিবডি পাওয়া গিয়েছিল। টিকা গ্রহণের ৬ মাস অতিবাহিত হবার পরে দেখা যায়, অধিকাংশের ক্ষেত্রেই এন্টিবডি এর পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ জন টিকা গ্রহীতার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশের এন্টিবডির মাত্রা হ্রাস পেয়েছে, গড় এন্টি বডির মাত্রা ৬৭৯২ AU/mL থেকে ৩৯৬৩ AU/mL তে নেমে এসেছে। এ সময় ২ জন টিকা গ্রহীতার দেহে পর্যাপ্ত এন্টিবডি পাওয়া যায়নি। বুস্টার গ্রহণের পরে শতভাগ অংশগ্রহণকারীদের দেহে ই এন্টিবডি পাওয়া যায় এবং প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই এন্টিবডির মাত্রা পুনরায় বৃদ্ধি পেয়ে গড় এন্টিবডির মাত্রা ২০৮৭৮ AU/mL এ এসে দাড়ায়। রক্তের প্যারামিটার গুলোতে (হিমোগ্লোবিন, প্লেটলেটসহঅন্যান্য) উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি।
মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, টিকাদানের উদ্দেশ্য হল মানবদেহে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করা- যা ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হবার এবং আক্রান্ত হলে রোগের তীব্রতার সম্ভাবনা কমায় বলে পূর্ববর্তী বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে। পাশাপাশি গবেষণালব্ধ ডেটায় দেখা যায়, সময়ের সাথে এন্টিবডির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যায়, আবার বুস্টার ডোজের মাধ্যমে পুনরায় কোভিডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ আরো জানান, কোভিড-১৯ অতিমারীতে বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ৪২ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ মানুষ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এর মাঝে প্রায় ২৯ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। কোভিড-১৯ অতিমারীর বিপর্যয় প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে সারা বিশ্বব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম চলমান আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে কোভিড অতিমারী মোকাবেলায় দেশে ভ্যাক্সিনেশন কর্মসুচী চলমান আছে এবং বর্তমানে বুস্টার ডোজ প্রদান শুরু হয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উদ্ভাবিত এবং সেরাম ইন্সটিটিউট, ভারতে প্রস্তুতকৃত কোভিশিল্ড ভ্যাক্সিন দিয়ে টিকা কার্যক্রম শুরু হয় এবং পরবর্তীতে ফাইজার, মডার্না, সিনোভ্যাকসহ বিভিন্ন টিকা এ কর্মসূচিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটির বেশি মানুষ টীকার প্রথম ডোজ এবং সাড়ে সাত কোটির বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ এবং ৩০ লাখের বেশি মানুষ টিকার বুস্টার ডোজ নিয়েছেন।
এই গবেষণা কার্যক্রমটিতে হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ সালাহউদ্দীন শাহ সহ-গবেষক হিসেবে এই গবেষণা প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ এই সংবাদ সম্মেলনে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here