গ্যাস্ট্রোইসফেজিয়েল রিফ্লাক্স ডিজিজ : রোজার মাসে ভাবনাহীন এক প্রতিকার।

আসুন জেনে নেই প্রথমে জিইআরডি কি?

জিইআরডি, যাকে গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স বলা হয়, হলো একটা অবস্থা যেখানে খাদ্যনালী (ইসোফেগাস)-র শেষে অবস্থিত বৃত্তাকার পেশী ঠিক করে বন্ধ হয় না আর পাকস্থলিতে থাকা যাবতীয় জিনিসগুলি খাদ্যনালীতে উঠে আসে ও জ্বালা সৃষ্টি করে। এটা অনেকটা বুকজ্বালা করার মতো। যদি কোনও ব্যক্তি সপ্তাহে দু’বারের বেশি বুকজ্বালা অনুভব করেন, তা জিইআরডি হিসেবে পরিচিত।

এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গ কি কি?

জিইআরডি’র প্রাথমিক লক্ষণ হলো বুকজ্বালা অনুভব করা করা দুইবারের বেশি এক সপ্তাহে।

অন্যান্য উপসর্গগুলি হলো:
●বুকের মাঝে জ্বালা ভাব
●হেঁচকি ওঠা
●গলায় জ্বালা
●গিলতে সমস্যা
●মুখে দুর্গন্ধ
●পেট ফাঁপা
●খাওয়ার পর অসুস্থ বোধ
●মুখে অপ্রীতিকর টক স্বাদ
●খাওয়ার পর বুকে ব্যথা
●উগরানো (পেটের অ্যাসিড মুখে চলে আসা আর অপ্রীতিকর
স্বাদ রেখে যাওয়া)

এর প্রধান কারণ কি কি?

জিইআরডি তখন হয়, যখন খাদ্যনালীর তলদেশে অবস্থিত পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে আর পাকস্থলিতে থাকা জিনিসগুলির ফের গলা অবধি উঠে আসাকে আটকাতে পারে না। বিভিন্ন কারণে এটি হতে পারে, যেমন:
●স্থূলতা
●অত্যাধিক ক্যাফিন অথবা মদ্যপান করা
●গর্ভাবস্থা
●উচ্চ-ফ্যাটযুক্ত খাবার
●অবসাদ উপলব্ধি করা
●হায়াটাল হার্নিয়া (পাকস্থলির উপরি ভাগ বুকে চলে আসা)
●ধূমপান
●পেইনকিলারের মতো কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ খাওয়া
●রাতের খাবার দেরী করে খাওয়া
●ঘন ঘন ভাজা খাবার খাওয়া

রোগ নির্ণয়:

রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো উপসর্গের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া। নানারকম টেস্ট রয়েছে, যা জিইআরডি নির্ণয়ের জন্য করা হতে পারে। সেইগুলো হল:

●এন্ডোস্কোপি
●ম্যানোমেট্রি
●অ্যাম্বুলারির অ্যাসিড প্রোব পরীক্ষা ইত্যাদি।

চিকিৎসা:

●মেডিকেশন- PPI, H2 ব্লকার, Antacids, Prokinetics ইত্যাদি।
●অস্ত্রোপচার বিকল্প- Fundoplication, এন্ডোস্কোপিক পদ্ধতি, LINX ডিভাইস ইত্যাদি।
এদের মধ্যে সর্বাধিক ব্যাবহৃত চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে PPI বা প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরস। সহজ ভাষায় অনেকেই যাকে গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ বলে চিনেন। বাজারে প্রচলিত PPI গুলো হচ্ছে অমিপ্রাজল, ইসমিপ্রাজল, লেনসোপ্রাজল, পেন্টোপ্রাজল ইত্যাদি যা বিভিন্ন কোম্পানির নামে আমাদের কাছে পরিচিত।
সবগুলো ঔষধই দুই বেলা করে খেতে হয় যা রোজার মাসে এক বিরম্বনার সৃষ্টি করে। এই PPI গুলোর মধ্যে একটি জেনেরিক হচ্ছে ডেক্সলেনসোপ্রাজল (Dexlansoprazole)। এই ঔষধটি জিইআরডি এর চিকিৎসায় এক অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। বিভিন্ন রিসার্চ এর মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে এর কার্যকারিতা।
এই ঔষধটির বড় গুন হচ্ছে দিনে মাত্র একবার সেবন করলে পরবর্তী ২৪ ঘন্টা এর কার্যক্রম অব্যাহত থাকছে।
সুতরাং যারা জিইআরডি নামক রোগটিতে ভূগছেন
এবং যাদের নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হচ্ছে তাদের জন্য এই পবিত্র রমজান মাসে এই ঔষধটি সত্যিই এক ভাবনাহীন প্রতিকার। তাছাড়া শুধু রমজান মাসেই নয় সবসময়ই এই ঔষধটি এই রোগের জন্য সেবন করা যথাযথ বলে মনে করা হয়।
অনুগ্রহ করে ঔষধটি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাত্রায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেবন করবেন।

ডা. শাকিলুর রহমান খান
এমবিবিএস (ঢাবি)।
এমজিএস (সুইডেন)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here