গরমে শিশুর যত্ন

গরমের সময় বড়দের যে পরিমানে কষ্ট হয় তার চেয়ে বেশি কষ্ট হয় শিশুদের।অনেক সময় তারা তাদের অসুবিধার কথা বলতেও পারে না। ফলে গরম থেকে নানা সমস্যা তৈরী হয়।

যেহেতু শিশুদের অবিভাবক আমরাই তাই গরম থেকে তাদের রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদের। এসময় বাড়তি কিছু বিষয় খেয়াল রাখাটা জরুরী ও শিশুর প্রয়োজন বাড়তি যত্ন।

এই সময় শিশুর খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে গোসল ও পোশাক নির্বাচনের সময়ও মায়েদের বিশেষ যত্নবান হতে হবে। গরমে শিশুরা বড়দের তুলনায় অনেক বেশি ঘেমে যায়। এ সময় মৌসুমজনিত নানারকম সমস্যাও দেখা যায়। তাই শিশুর প্রতি বিশেষ যত্নবান হলে এসব সমস্যা সহজেই এড়ানো সম্ভব।

গরমে শিশুদের সাধারণত যে সমস্যাগুলো বেশি হয়ে থাকে তা হচ্ছে জলবসন্ত, ফুসকুড়ি, পেট খারাপ, ত্বকের অসুখ ও ঠাণ্ডার সমস্যা।
আসুন এসব সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই-

জলবসন্ত বা চিকেন পক্স :
এ সময়টায় শিশুদের জলবসন্ত হয়ে থাকে। এটা সাধারণত এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের বেশি হয়। তবে চিকেন পক্সের টিকা নেয়া থাকলে এ রোগটি হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। এ অসুখের সময় শিশুর বিশেষ যত্ন নিতে হবে। তাকে নরম সুতি কাপড় পরাতে হবে। তরল বা গরম জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে , এর সঙ্গে অবশ্যই মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।
Baby Skin care

ত্বকের ফুসকুড়ি:
শিশুদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটা বেশি দেখা যায়। এটা সাধারণত ঘামাচি বা চামড়ার ওপরে লাল দানার মতো ফুসকুড়ি হয়ে থাকে। এই র্যাশ বা ফুসকুড়ি চুলকানোর কারণে শিশুকে অবশ্যই পরিস্কার রাখতে হবে। নিয়মিত গোসল করিয়ে পরিস্কার জামা পরাতে হবে। ফুসকুড়ির জায়গাগুলোতে বেবি পাউডার লাগাতে পারেন। এতে চুলকানি কিছুটা কমে যাবে। প্রতিবার কাপড় বদলানোর সময় শিশুকে নরম ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে পাউডার লাগিয়ে দিতে হবে। অনেক সময় ডায়াপারের কারণেও শিশুর ফুসকুড়ি হতে পারে। তাই খেয়াল রাখতে হবে, ভেজা ডায়াপার যেন শিশুর গায়ে বেশিক্ষণ না থাকে। ডায়াপার নষ্ট হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা খুলে নতুন ডায়াপার পরিয়ে দিন। তবে গরমের সময় বেশিক্ষণ ডায়াপার না পরিয়ে রাখাই ভালো। অনেক সময় র্যাশ বেশি হয়ে গেলে ঘা হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে.
পেটে অসুখ:
গরমের সময় সাধারণত বেশি হয়ে থাকে পেট খারাপ। শিশুর পেট খারাপ হলে তাকে ঘন ঘন স্যালাইন খাওয়াতে হবে। সেইসঙ্গে পানি অথবা ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। একই সঙ্গে তাকে তরল খাবারও দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত শিশুর পায়খানা স্বাভাবিক না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিশুর পানিশূন্যতা না হয় এবং তার প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে। এছাড়া শিশুর পায়খানার সঙ্গে যদি রক্ত যায় তবে অবহেলা না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। ছয় মাস বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এ সময় কোনো অবস্থাতেই মায়ের দুধ বন্ধ করা যাবে না। সেইসঙ্গে পানি ও অন্যান্য খাবারও দিতে হবে।

ঠাণ্ডার সমস্যা:
গরমে শিশুদের ক্ষেত্রে ঠাণ্ডার সমস্যাটাও বেশি হতে দেখা যায়। গরমে অতিরিক্ত ঘামের ফলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। তাই শিশু ঘেমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তার শরীর মুছে দিয়ে কাপড় বদলে দিতে হবে। গরমে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং তাকে সব সময় পরিস্কার কাপড় পরাতে হবে। এ সময় ঠাণ্ডা লেগে শিশুর মামস হতে পারে। মামস অনেক সময় অল্প দিনে সেরে যায়। কিন্তু বেশি দিন গড়ালে শিশুকে এমএমআর ইঞ্জেকশন দেয়া হয়। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞের পরামর্শমত ব্যবস্থা নিতে হবে।

Baby heir Care

নিতে হবে চুলের যত্ন:
এই গরমে আদরের ছোট্ট মণির চুলের দিকেও নজর দিতে হবে। গরমে চুলের গোড়া ঘেমে যায়, সঙ্গে ধুলাবালির আক্রমণ তো রয়েছেই। তাই রোগ প্রতিরোধে প্রথমেই শিশুদের চুলের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। অনেক সময় অতিরিক্ত গরমে চুলের ত্বকে খুশকি বা ঘামাচি বের হয়। তাই গরমের শুরুতেই চুল ছেঁটে ছোট করে দিতে হবে। এতে চুলের গোড়া ঘামওে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।

এক বছর বা তার কম বয়সে শিশুদের গরমের সময় মাথা অবশ্যই ন্যাড়া করে দিতে হবে। আর চুল একান্তই লম্বা রাখতে চাইলে তার প্রতি আরও একটু যত্নশীল হন। গোসল করার পর চুল ভালোভাবে মুছে নিন। বড় ফাঁকওয়ালা চিরুনি দিয়ে চুলটা ঠিকভাবে আঁচড়ে দিন। এরপর চুল শুকিয়ে গেলে ভালোভাবে বেঁধে দিন। শিশুর চুলে তাদের উপযোগী ও ভালো মানের শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। তাদের জন্য আলাদা চিরুনি ব্যবহার করা উচিত। সপ্তাহে দুই দিন চুলে শ্যাম্পু করা ভালো।
এসব বিশেষ সমস্যা ছাড়াও শিশুদের আরো অনেক ছোটখাট সমস্যাও হতে পারে। সেই সব সমস্যার দিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত। কারন সেই ছোট ছোট সমস্যা থেকেই জড় কোনো সমস্যা হতে পারে।
খেয়াল রাখুনঃ
আসুন দেখে নিন এরকম কয়েকটি বিষয়। যে দিকে আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, আপনার শিশুর সুস্বাস্থের জন্য।

১) বারবার পানি পান করান। ডাবের পানি, ফলের রস খাওয়ান। তবে কখনোই ঠান্ডা পানি খাওয়াবেন না।

২) এই গরমে আপনার শিশুর খাবারের বিষয়ে খেয়াল রাখুন। সাধারণত হালকা, পুষ্টিকর ও সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়ান। এছাড়া নরম খাবার ও পানীয় ফল খাওয়াতে পারেন। এছাড়া যতটা সম্ভব বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন। গরমে শিশুকে বাইরের খাবার দিলে তা খারাপ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। এছাড়া মাছ মাংস কম খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

৩) শরীরের তাপমাত্রা বাড়লে গা মুছে দিন। তবে খেয়াল রাখবেন, যেনো ঠান্ডা লেগে না যায়।
৪) সঠিক সানস্ক্রিন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার শিশুর কোমল ত্বক রক্ষা পাবে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে।

৫) গরমের সময় মশা, মাছি, পিঁপড়ে অথবা বিভিন্ন পোকামাকড়ের প্রকোপ দেখা যায়, যা আপনার শিশুর অসুস্থতার কারণ হতে পারে। আপনার ঘরকে এগুলো থেকে মুক্ত রাখতে অ্যারোসল বা অন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার শিশু যেন কোনোভাবেই এগুলোর নাগাল না পায়। এছাড়া ঘরকে পোকামাকড়মুক্ত রাখতে ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। ফুলের টবে বা অন্য কোথাও এমনকি বালতিতেও পানি জমতে দেবেন না।

৬) শিশুকে সরাসরি ফ্যান কিংবা এসির কাছে শোয়াবেন না। প্রয়োজনে ঘরের জানালা খুলে দিন।
৭) কোনও ভাবেই যেন ঘাম শরীরে না শুকায়, এতে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। এজন্য বারবার ঘাম মুছে দিন।
৮)গরমে শিশুকে বিভিন্ন প্রসাধনীর ব্যবহার বন্ধ রাখুন। গোসলের পর তেল ও লোশন দেওয়াও বন্ধ করুন। শিশুর ত্বকে যেন ঘামাচি না ওঠে এজন্য গোসলের পর এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘামাচি পাউডার লাগিয়ে দিন। এতে ঘামাচি ওঠা রোধ করবে ও শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে।

৯) আপনার শিশুর পোশাকের দিকে লক্ষ রাখুন ঘেমে ভিজে গেলে বা নোংরা হয়ে গেলে তা পরিবর্তন করে দিন।গরমে শিশুকে সাধারণত সুতির নরম ও পাতলা পোশাক পরাতে হবে। হাতাকাটা পোশাকও গরমে শিশুর জন্য বাছাই করতে পারেন। এছাড়া ডিসপোজেবল ন্যাপির পরিবর্তে সুতির পাতলা কাপড়ের ন্যাপি পরানো ভালো। কেননা ডিসপোজেবল ন্যাপিগুলো ঘাম ও তাপ শোষণ করতে পারে না তাই র‌্যাশ, ঘামাচি প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

১০) গরমে শিশুদের স্বাস্থ ঠিক রাখার অন্যতম দিক হলো নিয়মিত গোসল করানো। তবে বেশি ঠাণ্ডা পানি দিয়ে এবং খুব বেশি গোসল না করানো ভালো। কারণ এতে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। গোসলের সময় শরীরের ভাজযুক্ত জায়গাগুলো ভালো করে পরিস্কার করে ধুয়ে দিতে হবে। গোসলের পানিতে হালকা করে ডেটলও দিতে পারেন।
গোসল একবার করালেও দিনে দুই তিনবার হালকা পানি দিয়ে শরীর পরিস্কার করে দিতে পারেন। এতে শিশুর শরীর পরিস্কার থাকবে।

Abu Hasan limon
Govt. Reg. A-Grade Pharmacist
Publicity Secretary
Bangladesh Pharmacist Forum

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here