মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ কৃপায় পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের দশকের অষ্টম দিন সুস্থতার সাথে আমরা অতিবাহিত করছি, আলহামদুলিল্লাহ।
পবিত্র এ মাসের রোজার মধ্যে এতই বরকত ও কল্যাণ রয়েছে যে, ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় আর এর পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নিজে দিবেন বলে ঘোষণাও করেছেন।
পবিত্র মাহে রমজানের রোজা কেবলমাত্র আধ্যাত্মিক কল্যাণই লাভ হয় না বরং এতে দৈহিক শক্তিরও বিকাশ ঘটে। তাইতো রোজা-পালন সম্পর্কে যেমন রয়েছে আল্লাহতায়ালার নির্দেশ, অন্যদিকে রয়েছে অসংখ্য পার্থিব-কল্যাণ। এছাড়াও রোজা যে মানব জাতির রোগমুক্তির কারণ, তা বহু হাদিসে প্রমাণিত আর আজ চিকিৎসা বিজ্ঞানও রোজার অপরিহার্যতা স্বীকার করে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবি (সা.) বলেছেন: ‘তোমাদের খোদা বলেছেন, প্রত্যেক নেকির প্রতিদান দশ গুণ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত আর রোজার ইবাদত বিশেষ ভাবে আমার জন্য আর আমি স্বয়ং তার প্রতিদান দিব অথবা আমি স্বয়ং এর প্রতিদান হব’ (তিরমিজি, আবওয়াবুস সাওম)।
এমনিভাবে তিনি (সা.) আরো বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দ নির্ধারিত, একটি আনন্দ সে তখনি লাভ করে যখন সে ইফতার করে আর দ্বিতীয় বার সে তখনি আনন্দিত হবে যখন সে রোজার প্রতিদানে তার প্রভূর সাক্ষাৎ লাভ করবে’ (বোখারি, কিতাবুস সওম)। রমজানের রোজার মাধ্যমে একদিকে আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা লাভ করা যায় অপর দিকে দৈহিকভাবেও সুস্থ্য থাকা যায়।
আমরা জানি, মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, তার দৈহিক গঠন-প্রকৃতি ও স্থিতিশীলতায় অবদান রাখে সত্য, কিন্তু এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর কাজের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন সীমাবদ্ধতা আছে মানুষের দৈহিক কাজকর্মে। উদাহরণস্বরূপ, কোন মানুষ যখন অনেক সময় পর্যন্ত কাজ করতে থাকে, তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে পারে, তাহলে আবার কাজে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সতেজতা ফিরে পায়।
ঠিক তেমনিভাবে মানুষের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ; যেমন: জিহ্বা, লালাগ্রন্থি, হৃৎপিণ্ড, কিডনি, পাকস্থলী, কোষ, লিভার, মূত্রথলি, প্রভৃতিরও কাজের একটা নির্দিষ্ট প্রকৃতি, পরিমাণ ও সীমাবদ্ধতা আছে। অর্থাৎ মানুষ যখন সকাল-বিকালের নাস্তাসহ দুপুর ও রাতে খাবার খায়, তখন স্বভাবতই সর্বাবস্থায় তার উদর পূর্ণ থাকে বা উদরে খাদ্যকণা অবস্থান করে থাকে। আর এই খাদ্যকণাগুলোকে হজম করার জন্য মানবদেহের অভ্যন্তরীণ সামান্য লালাগ্রন্থি থেকে শুরু করে পাকস্থলী পর্যন্ত অনবরত কাজ করে থাকে।
এমনকি পেটে যদি একটি সরিষা পরিমাণ খাদ্যকণাও অবশিষ্ট থাকে, তাহলেও এই সামান্য খাদ্যকণাকে হজম করার জন্য অভ্যন্তরীণ সবকিছুই একসঙ্গে কাজে লেগে যায়। ফলে এগুলো কখনও ন্যূনতম বিশ্রামের সুযোগও পায় না এবং ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে বদহজম থেকে শুরু করে উচ্চ-রক্তচাপ, বহুমূত্র, পিত্তথলিতে পাথর, বাত, হাঁপানি, পেপটিক আলসার, করোনারি হৃদরোগ ও মাইগ্রেইনসহ অনেক জটিল রোগ হতে পারে।
কিন্তু এক্ষেত্রে রোজা এমন একটি মাধ্যম, যা মানবদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সামঞ্জস্য রক্ষাসহ সব ধরনের রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। কারণ পূর্ণ এক মাস রোজা রাখার পর ওইসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দৈনিক বেশ কয়েক ঘন্টা বিশ্রামের সুযোগ পায়। ফলে পরবর্তীতে এগুলো আরও শক্তি নিয়ে মানবদেহে কাজ করতে পারে। এমনকি অনবরত খাদ্যগ্রহণে মানবদেহের পেটে এক ধরনের বিষাক্ত বর্জ্য-পদার্থের সৃষ্টি হয়, যা পানাহার বা রোজা ব্যতীত পরিহার সম্ভব নয়।
এছাড়া সাধারণত এ বরকতময় রমজান মাসে রোগব্যাধি কম প্রকাশ পায়। এককথায় রোজা রাখার ফলে আমরা যেভাবে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ করতে পারি অপর দিকে দৈহিকভাবেও সুস্থ থাকতে পারি।
আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে রমজানের দিনগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগিতে রত থেকে কাটানোর তৌফিক দান করুন, আমিন।